টাওয়ার ব্রিজ
বিশ্ববাসীর কাছে টাওয়ার ব্রিজ অতি পরিচিত একটি নাম। এই ব্রিজের বর্ণনা দিয়ে শেষ করা যাবে না। বিস্তারিত বিবরণ পরে দেয়া হবে, যে টুকু সম্ভব। আপাতত এটুকুই বলে রাখি, ব্রিজটির মধ্যেখানে ইস্পাতের জোড়া রয়েছে। রয়েছে মানে রাখা হয়েছে।
বছরে একবার খুলে দেয়া হয়। তখন দুই পার্ট হয়ে যায় ব্রিজটি। অভিনব সেই দৃশ্যটি দেখবার জন্য তখন হাজার হাজার পর্যটক জড়ো হন টেমস পাড়ে।
আমরা গিয়েছিলাম টেমস নদীর উপর দিয়ে, টাওয়ার ব্রীজ হয়ে। ফিরে আসলাম পানির নিচ নিয়ে।
নদীর নিচ দিয়ে রাস্তা তৈরি করে রাখা হয়েছে। এর নাম রতার হাইট টানেল। এই টানেলের উদ্বোধন হয় ১২ জুন ১৯০৮ সালে। মেইন সুরঙ্গ পথ ১ মাইল জুড়ে। সব সময় লাইট জ্বালিয়ে রাখা হয়।
গাড়ির গতিবেগ সীমিত রাখতে হয় বিশ মাইলের ভেতরে।
টানেলের ভেতর দিয়ে ফিরে আসতে আসতে আমি ভাবছিলাম ঐতিহ্যের পূজারী ব্রিটিশের মাথা কত আগে থেকে কাজ করছিলো। একশ বছর আগে তাদের টেকনোলজি কত বেশি এডভান্স ছিলো। শত বছর থেকে নদীর পানির নিচ দিয়ে তৈরি করা সুরঙ্গ পথ দিয়ে গাড়ি ঘোড়া চলছে। দেয়ালে কোনো ফাটল পর্যন্ত ধরেনি।
ব্রিটিশের মাথার প্রশংসা না করে উপায়ও নেই। এমনিতে তো আর ২শ বছর গোলাম বানিয়ে রাখেনি আমাদের!
বাসায় ফিরে এসে দুপুরের খাবার খেলাম। সন্ধ্যা পর্যন্ত বিশ্রাম। মাগরিবের নামাজের পর আবার বেরিয়ে পড়লাম আমরা। গেলাম সিলেটের জহির আলী সাহেবের বাসায়।
বিরাট কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ লোক। স্বপরিবারে আছেন তিনি। টেকনিক্যাল কিছু কাজে তার কাছে যাওয়া। কাজ শেষ করে চা-নাস্তা করে বেরিয়ে আসলাম। বাংলাদেশের জনপ্রিয় বক্তা মাওঃ যুবায়ের আহমদ আনসারী সাহেব লন্ডন সফরে জহির ভাইকে নিয়েই ঘুরে বেড়ান।
রাত একটায় টিভি অন করলাম। এটিএন বাংলার মাধ্যমে দেশের খবর নিলাম। মনটা খারাপ হয়ে গেলো। গ্যাস নেই, পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই। কবে যে গরীব এই দেশটি মাথা তুলে দাঁড়াবে কেউ জানে না।
আজ ব্রিটিশ এয়ারওয়াইজ ‘ক্রু’দের ডাকা তিন দিনের ধর্মঘট শেষ হয়েছে। গত নভেম্বর ০৯ এ কিছু কর্মচারীকে অবৈধভাবে ছাটাই করার প্রতিবাদে এবং বেতন/ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে ছিলো এই ধর্মঘট। দাবি আদায় হয়নি। আবারো নতুন করে ৪ দিনের ধর্মঘট এর ডাক দেয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ ধর্মঘটিদের সাথে আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন, সমাঝোতার চেষ্টা করছেন।
কাজ হচ্ছে না।
ব্রিটিশ বিমানের জন্য নির্ধারিত টার্মিনাল নম্বার-৫ খা খা করছে। টার্মিনালটি পড়ে আছে মরাবাড়ির মতো। শত শত বৃটিশ বিমান লাইন বেধে শুয়ে আছে মাটিতে। দেখে মনে হচ্ছে অনেক দিনের ক্লান্ত এরা।
এই ফাঁকে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিচ্ছে। ধর্মঘটি কেবিন ক্রু ও কর্মচারীরা এয়ারপোর্টে এসেছে ঠিকই, কিন্তু কাজে যোগ দিচ্ছে না। নেচে গেয়ে হৈ-হুল্লোড় করে সময় পার করছে।
ব্রিটেন একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক দেশ। সরকারের যে কোনো কাজের বা সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানানোর পূর্ণ অধিকারই জনগণের রয়েছে।
তবে আমাদের মতো ধ্বংসাত্মকভাবে নয়। নিজের অধিকার চাইতে গিয়ে অন্যের উপর সেটা চাপিয়ে দিয়ে বা অন্যকে জোর করে মানতে বাধ্য করে নয়।
আমাদের দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলো হরতাল ডাকে। তারা বলে এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। কথাটা সত্য।
স্বীকার করি আমিও। কিন্তু হরতাল ডাকা যেমন তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, তেমনি মানা না মানাও অন্যের গণতান্ত্রিক অধিকার; এই সত্যটি তারা মানতে চায় না। এটা কেমন গণতন্ত্র চর্চা আমার বুঝে আসে না।
রাতের সংবাদের মাধ্যমেই জানতে পারলাম আমার সিলেটে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষক হারুনুর রশীদ অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয়েছেন। মনটা মোচড় দিয়ে উঠলো।
গত কয়েক মাস ধরে দেশের কলেজ-ভার্সিটিগুলোতে ছাত্র হত্যার ঘটনা ঘটছে। এবার বুঝি শুরু হলো শিক্ষক হত্যা।
রাতে বসে তাজুল ভাই ও আমি এক মাসের প্রোগ্রামসূচি ঠিক করে ফেললাম। নাগরিক অধিকার আন্দোলনের ২টি প্রোগ্রাম, একটি সাহিত্য প্রোগ্রাম, একটি টেলিভিশন প্রোগ্রাম। সবকিছু ঠিকঠাক করে ঘুমোতে গেলাম রাত ৩টায়।
...চলবে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।