হযরত শাহজালাল রাহ. আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
এর আগে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশ করেছি। এই প্রথম হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রবেশ করলাম। মাত্র কয়েকদিন হল এখান থেকে জিয়াউর রহমান সাহেবকে বিদায় জানিয়ে হযরত শাহজালালকে আসন দেয়া হয়েছে।
ইদানিং আমাদের সরকারগুলোর পীর-ফকিরদের প্রতি ভক্তি ও অনুরাগ ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে। গত বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে চট্টগ্রাম এম.এ হান্নান বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে হযরত শাহ আমানত (রহ.) এর নামে বিমানবন্দরের নামকরণ করেছিলো।
যেহেতু বর্তমান সরকার গত সরকার থেকে আরো বেশি সংখ্যাগরিষ্টতা নিয়ে এসেছে, সে জন্য জিয়া বিমানবন্দরের জন্য আরো বড় একজন পীর সাহেবকে খুঁজতে লাগলো তারা।
অবশ্য খুব বেশি খোঁজাখুজি তাদের করতেও হলো না। শাহজালাল সাহেব হাতের কাছেই ছিলেন। ব্যস, ঢাকঢোল পিটিয়ে শাহজালালকে বসিয়ে দেয়া হলো ওখানে। জিয়া বিমানবন্দর হয়ে গেলো হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর।
অবশ্য এতে করে শাহজালালের কতটুকু সম্মান বেড়েছে বা লাভ হয়েছে জানা যায়নি। তবে গরীব এই দেশের কয়েকশ কোটি টাকার কিন্তু শ্রাদ্ধ হয়ে গেছে!
এয়ারপোর্টের অভ্যন্তরে চোখ বুলাতে লাগলাম আমি, চতুর্দিকে। উদ্দেশ্য, শাহজালালের নামের কারণে কোনো আধ্যাত্মিকতা চোখে পড়ে কি না! মাঝে মধ্যে কিছু দেয়ালের রং উঠে যাওয়া এবং ডাষ্টবিনের বাইরেও ময়লা পড়ে থাকা ছাড়া আর কোনো পরিবর্তন চোখে পড়লো না। নজরানার লেনদেনও যে বন্ধ হয়ে গেছে, এটা ভাবারও কোনো কারণ নেই।
চেকইনের মুহুর্তে ঘুমে হেলে দুলে পড়ছেন, এমন এক তড়িৎকর্মা কর্মকর্তা (কিংবা কর্মচারী) জিজ্ঞেস করলেন-
লাগেজে কী আছে?
আমি বললাম, বই।
কিসের বই? কয়টি বই?
আমি বললাম, আমার লেখা বই, ৬০/৭০ পিস হবে।
শুধুই বই? আর কিছু নেই?
বললাম, আছে। কিছু কাপড়- চোপড় আছে। একটি ডায়রী ও কলম আছে। ২৫টি বাখরখানির একটা প্যাকেট আছে।
বললো, জর্দ্দা কয় ডজন আছে?
আমি বললাম, জর্দ্দা দু’টি আছে। (সত্যি কথাটাই বললাম, ৫০টির কাজ যদি দু’টিতেই চালিয়ে নেয়া যায়, তাহলে সংখ্যা বাড়ানোর দরকার কী?
জর্দ্দার ব্যাপারে বিশেষভাবে প্রশ্ন করার কারণ আছে। সাথে করে কয়েক ডজন জর্দ্দা নিয়ে যেতে পারলে ভাল ব্যবসা হয়।
আমার কথা তার বিশ্বাস হলো কি না জানি না। তবে আর ঘাটাঘাটি না করে বললো, যান।
এগিয়ে গেলাম আমি। আমি জার্নি করবো ইত্তেহাদ এয়ারওয়াইজে। ইত্তেহাদ’র কাউন্টার থেকে বর্ডিং কার্ড নিলাম। এম্বারগেশন কার্ড ফিলাপ করে দিলাম। ইমিগ্রেশনে ইত্তেহাদের যে কর্মকর্তার মুখোমুখি হলাম, ভদ্রলোককে একটু অভার সিনসিয়ারই-ই মনে হলো।
নাম তানভির হুসাইন। বুকে লাগানো নেইম প্লেট থেকেই নাম জানলাম আমি। সকল যাত্রীর পাসপোর্টই উল্টে পাল্টে চেক করছেন। আর সকলের দিকেই তাকাচ্ছেন সন্দেহের চোখে। আমার সাথে তার কথাবার্তা ছিলো নিম্নরূপ br /> রশীদ জামীল?
জ্বি।
ভিজিটে যাচ্ছেন?
ইচ্ছে করছিলো বলি, জ্বিনা জনাব, নানাবাড়ি যাচ্ছি। অনেকদিন হলো নানা নানীকে দেখা হয়নি তো। পাসপোর্ট দেখার পরও আমাকে কেন প্রশ্ন করতে হবে আমি ভিজিটে যাচ্ছি কিনা। নিজেকে সংযত করে বললাম, জ্বি।
লন্ডনে কোথায় উঠবেন?
আত্মীয়-স্বজন কে কে আছেন?
ফিরবেন কবে?
ভিসা তো অনেক আগেই পেয়েছেন।
এত দেরি কেন?
প্রশ্নবানে জর্জরিত আমি। যথেষ্ট বিরক্তি নিয়ে জবাব দিলাম ।
তানভির হুসাইন খুটিয়ে খুটিয়ে পাসপোর্ট চেক করতে লাগলেন। আমার পাসপোর্টে ইতালির ভিসা লাগানো ছিলো। তিন মাস আগে আমার এক খালাতো ভাই ও বন্ধু ইতালি পাড়ি জমানোর পায়তারা করছিলো।
খানিকটা কৌতূহলের বশবর্তী হয়ে তাদের সাথে আমিও আমার পাসপোর্ট জমা করে দিয়েছিলাম। তবে ইতালি যাবার কোনো ইচ্ছা তখনও ছিল না, এখনও নেই। চৌদ্দ দিনের মাথায় পাসপোর্ট ফেরৎ পেলাম। আমার সঙ্গী দুজনকে আপিলের সুযোগ দিয়ে পাসপোর্ট ফেরৎ দিয়েছে। বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করলাম আমার পাসপোর্টে সেনজিন ভিসা লাগানো।
ইতালি, গ্রীস, পর্তুগাল, রোমানিয়া, তথা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত চৌদ্দটি দেশ সফর করার সুযোগ সম্মলিত ভিসাকে বলা হয় সেনজিন ভিসা।
সেধে সমস্যা বাধালাম। এখন আমি ইতালি যাবো কোন দুঃখে। ওখানে কে আছে আমার? দু’পাঁচজন বন্ধু বান্ধবের সাথে দেখা করার জন্য ইতালি যাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। আর এই বিলাসী ভ্রমনের পেছনে খরচ করার মতো পয়সাও তো নেই আমার।
আবার ভিসা তারা সেধে দেয়নি। আমি চেয়েছিলাম বলেই দিয়েছে। এখন যদি না যাই, তাহলে ইতালি এ্যাম্বেসি বিগড়ে যেতে পারে। ভাবতে পারে ফাজলেমী করেছি। হয়ত দেখা যাবে আমাকে ব্লাক লিষ্টেড করে রেখেছে।
আগামীতে সত্যি সত্যি কখনো যেতে চাইলেও আর সুযোগ দেবে না।
সাত হাজার দু’শ টাকা ভিসা ফি দিয়ে ভিসা পেয়েছিলাম। আরো ২ হাজার টাকা কনসালটেন্সি ফি দিয়ে একটি কাগজ তৈরি করে এ্যাম্বেসি বরাবরে মেইল করলাম। মেইলের মাধ্যমে তাদের জানানো হলো, আমাকে ভিসা প্রধানের জন্য অনেক শুকরিয়া। তবে এই মুহুর্তে দেশে আমার জরুরী কিছু প্রোগ্রাম (!) পড়ে যাওয়ায় আমি যেতে পারছি না।
পরবর্তীতে ফ্রি সময়ে যেতে চাইবো। অবশ্য যদি আমাকে পুনরায় ভিসা দেয়া হয়, তো।
তবে ইতালি না গেলেও পাসপোর্টে তো ইতালির ভিসার স্টিকার লাগানো রয়েছিলো। ব্যাপারটি নজরে পড়লো তানভির হুসাইনের। তিনি বললেন,
ইতালির ভিসা নিয়েও যাননি কেন?
রাগ এসে গেল আমার।
এমনিতেই সারারাত ঘুমাইনি। এর মধ্যে ফালতু প্রশ্ন! মনে মনে বললাম, আমি ভিসা পেয়ে ইতালি গেলাম কি গেলাম না, তাতে তোর কি-রে ব্যাটা! তোর এতসব জানার দরকার কী? তুই ইত্তিহাদের লোক। ইতালির না। তুই দেখবি তোর দেশের ব্যাপার। তাছাড়া আমি তো আমিরাত যাচ্ছি না।
আমি যাচ্ছি যুক্তরাজ্য। তোদের দেশের বিমান ভাড়ার বিনিময়ে ব্যবহার করছি মাত্র।
যথাসম্ভব নিজেকে সংযত রেখে শুধু বললাম, ইচ্ছে করেনি, কোনো সমস্যা?
আমার এই জবাবের মধ্যে কিছুটা ঔদ্ধত্ব মেশানো ছিলো সন্দেহ নেই। চোখ তুলে শুধু লোকটি তাকালো আমার দিকে। আর আমিও জানি এ পর্যন্তই।
এরচে বেশি কিছু করার ক্ষমতাও তার নেই। ভুরু কুচকে পাসপোর্ট ফেরত দেয়া হলো আমাকে। গিয়ে বসলাম ওয়েটিং রোমে। রাত ৪টা বাজে। ফ্লাইট ৫টায়।
একঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে।
অবশ্য এতক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। সাড়ে ৪টায়ই আমাদেরকে একে একে নিয়ে যাওয়া হলো বিমানের ভেতরে। লবঙ্গ ললনারা কৃত্রিম হাসি দিয়ে বরণ করে নিতে লাগলো সকল যাত্রীকে। নির্ধারিত সিটে বসে উড়াল দেয়ার অপেক্ষা করতে লাগলাম।
...চলবে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।