আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিলেতের হাওয়া (৩৬)


অলস দিন ১০ এপ্রিল শনিবার। দেশে ফোন করলাম বন্ধু বিলালের কাছে। বিলাল মানে মোঃ বিলাল উদ্দিন উরফে বিলাল ভাই উরফে বিলালচা’। দেশের খোঁজ-খবর নিলাম। বললাম, কী অবস্থা? এইতো, ভাল।

দেশের অবস্থা কী? খুবই ভাল। তিন দিন যাবৎ ঝড়-তুফান চলছে। বিদ্যুৎ নেই। ভুতুড়ে অবস্থা। তোমার খবর কী? আমি তখন মজা করে বললাম, ভাল না।

ঝড় তুফান নেই। একটি মুহুর্তের জন্যও বিদ্যুৎ যাচ্ছে না। রাস্তাঘাটে যানজট নেই। ধুলোবালি নেই, মশার অত্যাচার নেই। এত নেই নেই’'র মধ্যে ভাল থাকি কী করে? সে বললো, ভাল।

এমন ‘ভাল না থাকা’ই তো ভাল। তারপর, কবে আসছো? বললাম, দেখি, দশ/পনেরো দিনের মধ্যেই চলে আসতে পারি। সে বললো, পাণ্ডুলিপির অবস্থা কী? বললাম, পয়েন্ট টুকছি। দেশে এসে তবেই লিখতে শুরু করবো। বিলাল লেখক নয় তবে প্রথম শ্রেণীর একজন পাঠক।

আমার যত লেখালেখি, সেগুলো প্রকাশের আগে হাজির করি তার সামনে। সে প্র“ফ দেখে দেয়। বানান সম্বন্ধে খুবই সিনসিয়ার সে। বাক্যের অসামঞ্জস্যতা বা বেখাপ্পাপনা ধরিয়ে দেয়। বাক্যের সাথে ভাবের মিল হচ্ছে কি না, পরস্পর সাংঘর্ষিক কোনো চিন্তার প্রতিফলন ঘটে যাচ্ছে কি না, অসব বিষয় চোখে আঙুল দিয়ে ধরিয়ে দেয়।

এজন্য কখনো তাকে ধন্যবাদ বা কৃতজ্ঞতা জানানো হয়নি। আজও জানাবো না। কারণ In the friendship No Thanks No sorry. বন্ধুত্বে ধন্যবাদ বা স্যরির কোনো জায়গা নেই। দুপুর তিনটা। ঘুরতে বের হলাম।

চলে গেলাম বাংলা টাউনে। মোবাইলের পেটে কিছু খাদ্য ঢুকালাম। তারপর গেলাম আমার তালেবুল ইলিম ভাইদের বিশ্বস্থ আবাস আলতাব আলী পার্কে। প্রথম প্রথম ইস্ট লন্ডন মসজিদ সহ বিভিন্ন মসজিদে তাদের থাকতে দেয়া হয়েছিল। এখন রাতে ঘুমানোর জন্য মসজিদের দরজা তাদেরকে আর খুলে দেয়া হয় না।

তবে এই আলতাব আলী পার্ক প্রথম দিন থেকেই তাদেরকে কোলে তুলে রেখেছে। এখন পর্যন্ত রেখেছে। আলতাব আলী নামের আরো একজন বাঙালির নামের বরকতেই কিনা-কে জানে। গ্রীণষ্ট্রিট থেকে ফোন করলেন নাজিম ভাই। গতকাল না খেয়ে চলে আসায় রাগ করলেন।

বললেন, আমাদের সাথে আপনার দু’'দিন রাতেও থাকার কথা ছিলো। ভেবে রেখেছিলাম গল্পগোজব করবো। কিন্তু আপনি তো... আমি বললাম, চিন্তার কারণ নেই। আমি আমার সফরের শেষ সপ্তাহ কাঁথা-বালিশ নিয়ে আপনাদের ওখানেই চলে আসবো। তখন দেখবো আপনার পেটের ভেতরে কত গল্প-গোজব আছে।

নাজিম উদ্দিন সাহেবের সাথে কথা শেষ হতেই অক্সফোর্ড থেকে ফোন করলো তাহসীন। বললো, ১২ তারিখটা একটু পিছিয়ে দেয়া যায় না? আমি বললাম, কী ব্যাপার? বিশাল কোনো প্রোগাম-টগ্রাম আয়োজন করছো নাকি? দেখো আবার, অক্সফোর্ডওয়ালারা যেন আমার আগমনের খবর জানতে না পারে। ওরা জানলে আমাকে সহজে ছাড়বে না। তারা কি জেনে-টেনে ফেলেছে নাকি? তাহসীন আমার রসিকতায় হেসে উঠলো। বললো, আসলে হয়েছে কি, আমি আমার শশুরকে আপনার কথা বলেছি।

বলেছি আপনি ১২ তারিখ আসছেন। তিনি বলেছেন, আপনি ১২ তারিখ এলে যেন ৪/৫ দিন থাকার জন্য আসেন। আর তা নাহলে যেন আরো ২/৩দিন পরে আসেন। এর কারণ, তিনি একটু বাইরে আছেন। আমাকে বলেছেন, ভাতিজা অক্সফোর্ড আসবে আমার বাসায় আসবে, আর আমি থাকবো না, এটা কেমন কথা।

তাহসীন তার যে শশুরের কথা বললো, তিনি হচ্ছেন প্রবীণ আলেম মাওঃ আসগর হুসাইন। আমার আব্বার ভাল বন্ধু ছিলেন। যখনই দেশে আসেন আমাকে দেখে যান। আমি তাহসীনকে বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে। আমি না হয় দু’'দিন পরেই আসবো, তাড়াহুড়ার তো কিছু নেই।

রাত ৯ টায় কেনিংটাউন থেকে ফোন করলো ছোট ভাই পাপেল। আতিকুর রহমান পাপেল। আজ তার অফ ডে। বুঝা গেলে হাতে সময় আছে অনেক। বললো, কী করছেন? বললাম, কী আর করবো, বসে বসে লিখছি? সে বললো, এই সফরের কাহিনী নিয়ে লেখা বই’র নাম কী হবে? আমি বললাম, দেখি, কিছু একটা নাম দিলেই হলো।

নাম ‘স্বপ্ন কন্যার দেশে” ও দিয়ে দিতে পারি। সে বললো, স্বপ্ন কন্যার দেশ কেন? আমি বললাম, আমাদের দেশের ম্যাক্সিমাম ছেলেই সাবালক হবার পর থেকে স্বপ্ন দেখতে থাকে কোনো রকমে একটি লন্ডনী কন্যা বিবাহ করে লন্ডন চলে যাওয়া যায় কি না। তাদের কাছে লন্ডনী মেয়ে অনেকটা স্বপ্ন কন্যার মতো। সে বললো, তা হলে আপনার জানা আংশিক সত্য। আমাদের দেশের কোনো বাবা মায়ের মেয়ে যদি একটু সুন্দরী হয় এবং সাথে একটু পড়ালেখাও থাকে, তাহলে মা-বাবা চেষ্টা করেন মেয়েকে তাবিজ বানিয়ে কোনো একটা লন্ডনী ছেলের গলায় ঝুলিয়ে দিতে।

তাই আমার অনুরুধ, স্বপ্নকন্যা ও স্বপ্নপুরুষের মাঝামাঝি কিছু একটা নাম ঠিক করুন। তারপর হাসতে হাসতে বললো, আর তাহলে আমরা যারা বিয়ে করে লন্ডন এসেছি, তারাও বেঁচে যাই। আমি বললাম, তোমার পরামর্শ ভাল। যুক্তি আছে। তুমিই তাহলে একটা নাম দিও।

আর তোমার এই পরামর্শটা আমার মনে থাকবে। তোমার বেঁচে যাওয়ার উদ্ধৃতিসহ লিখেও ফেলতে পারি। অনেক্ষণ হাসলো সে। সে বললো, আমি জানি, আপনি সেটা লিখবেনই। কথাটা বলার পরই আমি বুঝতে পেরেছি, আপনি সবই লিখবেন।

জের জবর পেশ সহ। আমি বললাম, কী আর করা। আংশিক নয়, পাঠকের পুরোটা জানার অধিকার আছে। পাঠক ঠকানো কি উচিৎ ? সে বললো, না, মোটেও না। ...ক্রমশ
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।