ডবল জুম’আ
আজ ৯ এপ্রিল শুক্রবার। জুমআর নামাজ গিয়ে আদায় করার কথা ফরেস্ট গেটে। হোয়াইট চ্যাপল থেকে বাসে যেতে ৪০/৪৫ মিনিট মতন লেগে যায়। একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হচ্ছে ইতোমধ্যে আমি একা একা ঘুরতে শিখেগেছি।
কিছু মুখে না দিয়েই বেরিয়ে পড়লাম।
গিয়ে দেখলাম মানুষ জুমআ'’র নামাজ পড়ে বেরিয়ে আসছে। খুব খারাপ লাগতে লাগলো। জুমআ’'টা তাহলে মিস হয়ে গেলো।
গিয়ে ঢুকলাম মসজিদে। জোহরের নামাজ আদায় করা দরকার।
বাড়ি থেকে ৪৮ মাইল দূরে গেলে মুসাফির। জুমআ' মাফ। অথচ আমি সাত হাজার মাইল দূরে গিয়েও মুসাফির হতে পারি নি। এর কারণ, মুসাফির হওয়ার শর্ত দুটি।
১) বাড়ি থেকে ৪৮ মাইল দূরে যেতে হবে।
২) ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করতে হবে।
আমি তো গেছি ১ মাসের জন্য।
মসজিদে প্রবেশ করে দেখলাম খতিব মাওলানা নাজিম উদ্দিন সাহেব খুতবা দেয়ার পায়তারা করছেন। ব্যাপার কি? এতদিন দেখে এসেছি শুধু ঈদের নামাজেই আগে নামাজ, পরে খুতবা। জুমআ’র নামাজে তো পরে খুতবা দেয়ার কথা না! ঘটনা কী?
বসে বসে খুতবা শুনলাম।
খুতবার পর যথারীতি নামাজ শুরু হলো। আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে নামাজে শরীক হলাম। পরে খোঁজ নিয়ে জানাগেলো এক জামাতে মুসল্লির সংকুলান হয়না বলে এখানে জুমআ’র দু'’টি জামাত হয়। কোনো কোনো শুক্রবারে নাকি তিনটিও হয়।
নামাজের পরে আতাউর ভাই, নাজিম ভাই সহ অন্যরা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন খাবারের ইন্তেজামে।
আজ দুপুরে তাদের সাথে খাওয়ার কথা। আতাউর ভাই’র সাথে কথা বলে খিদমাহ সম্বন্ধে একটা খসড়া ধারণা নিতে চেষ্টা করলাম-
এখানে নিচ তলায় মসজিদ। মানডে টু ফ্রাইডে মক্তব চলে। শনিবারে ইভিনিং মক্তবের ব্যবস্থা আছে। বয়স্কদের জন্য কুরআন শিক্ষা কোর্সের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা আছে।
প্রতি বুধবার এশার নামাজের পরে হালকায়ে জিকির। সপ্তাহে একদিন মাওঃ হাসান নূরী সাহেব এসে তাফসীর করেন। ম্যারেজ সার্টিফিকেট ইস্যু, অসহায়দের সাহায্য সহ আরো অনেক সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছে খিদমাহ।
খাবার তৈরি হচ্ছে, এমন সময় মাইলেন্ড থেকে ফোন করলেন চাচাতো ভাই ইমদাদ । বললেন তোর না আমার বাসায় আসার কথা ছিলো।
আমি বললাম, জ্বি, আসবো।
কবে আসবি?
জ্বি, দু’'তিনদিনের মধ্যেই আসবো।
তিনি বললেন, এখন আছিস কোথায়?
আমি বললাম, ফরেস্টগেট।
ফরেস্টগেট কোথায়?
খিদমাহ একাডেমীতে।
ঠিক আছে, তুই ওখানেই থাক।
আমি আসছি। দুপুরে একসাথে খাবো।
আমি বললাম, আজতো এখানে খাওয়ার কথা। কাল-পরশু এসে আপনার সাথে খাই?
তিনি বললেন, বেশি কথা বলে তো লাভ নেই। আমি আসছি।
তোকে কিছু বলতে হবে না। আতাউর ভাই তো? আমি তার সাথে কথা বলবো।
৫/৬ মিনিটের মধ্যেই তিনি তার গাড়ি নিয়ে এসে হাজির হলেন। আতাউর ভাইকে বলে আমাকে নিয়ে গেলেন মাইল্যান্ড। তার বাসা, বো’ তে।
খাওয়া-দাওয়া করার পর তিনি আমাকে গাড়ি করে ফিরিয়ে দিয়ে গেলেন হোয়াইট চ্যাপেল।
হোয়াইট চ্যাপেল ঘুরছি। ঘুরতে ঘুরতেই দেখা হয়েগেল সিলেট ভাতালির শাহীন ভাই’র সাথে। শাহীন ভাই দীর্ঘদিন মদিনা মার্কেটে কম্পিউটার ও ফোন ফ্যাক্সের ব্যবসা করেছেন। ভিজিট ভিসায় যুক্তরাজ্য গিয়ে আর ফিরে আসেন নি।
ওখানকার মায়ার জালে জড়িয়ে গেছেন !
দেখা হলো সিলেট বিয়ানীবাজারের মইনুল হক’র সাথে। সিলেট তালতলায় আমাদের ব্যবসায়িক অফিস যে ফ্লাটে, তিনি সেই বিল্ডিং এর স্বত্ত্বাধিকারী। হালকা কুশল বিনিময় করে বিদায় নিলাম।
কয়েকটি বাংলা পত্রিকা কিনে বাসায় ফিরে এলাম।
জনমত পত্রিকায় আজ আমাকে আকর্ষণ করার মতো দু’টো নিউজ ছাপা হয়েছে।
একটির শিরোনাম “লেখক রশীদ জামীল এর একক গ্রন্থ প্রদর্শনী ১১ এপ্রিল”। দ্বিতীয়টি “লেখক রশীদ জামীল এখন যুক্তরাজ্যে” বিষয়ক। সাথে আমার ছবি। ফায়সাল ভাই আমার ছবি না পেয়ে বাঙালির মধ্যপ্রাচ্য বই’র লাস্ট ফ্ল্যাপ পেজ থেকে স্ক্যান করে ছবি বের করেছেন। সপ্তাহিক বাংলাদেশেও আগাম নিউজ হয়েছে।
ইউরোবাংলায় বিজ্ঞাপন, নিউজসহ।
রাতে ফোনে কথা হলো অক্সফোর্ডে থাকা নাঈম ও আহমদ তাহসীনের সাথে। তারা আমাকে অক্সফোর্ড ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানালো। অবশ্য আমন্ত্রণ না করলেও আমি এমনিতেই যেতাম। এত কাছে এসেও যদি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় না দেখা হয়, তাহলে আফসোসের কোনো শেষ থাকবে না।
তাহসীন বললো, কবে আসবেন অক্সফোর্ড?
আমি বললাম, ১২ তারিখ, সোমবার।
সে বললো, ভিক্টোরিয়া থেকে ট্রেনে বা বাসে চলে আসবেন। আমি ষ্টেশন থেকে আপনাকে রিসিভ করবো।
আমি বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে।
...ক্রমশ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।