আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিলেতের হাওয়া (৩৩)


আরিফুল ইসলাম। দেশের বাড়ি মাধবপুর, হবিগঞ্জ। ২১ বছরের নিষ্পাপ চেহারার এই ছেলেটি মাধবপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেছে। ঢাকা আদমজি ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে ক্যামিষ্ট্রিতে অনার্স করা অবস্থায় ডাক আসে লন্ডনের। ৫ বোন ২ ভাই তারা।

বাবা ব্যবসায়ী। মাধবপুরে ব্যবসা করেন। আরিফকে জিজ্ঞেস করলাম, কেমন আছো? সে বললো, ভাল নেই। বললাম, ভাল নেই কেন? দেশ থেকে টাকা এনে চলি। ভাল থাকি কী করে।

কাজ-টাজ কিছু করছো না? কাজ পাবো কোথায়? মাঝে মধ্যে লিফলেটিং-এর কাজ করি। তোমার কলেজ কোনটি? আইকন কলেজ। আইকন কলেজ না বন্ধের তালিকায়? আবার অনুমোদন পেয়েছে। পড়ালেখা কেমন চলছে? মোটামুটি। তারপর আরিফ স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে বললো, আসলে ভাই, দেশ থেকে যে স্বপ্ন দেখে এসেছিলাম, এখানে এসে তার কোনো মিলই খুঁজে পাচ্ছি না।

বললাম, কী স্বপ্ন দেখেছিলে তুমি? ভেবেছিলাম, এদেশে এসে পড়ালেখা তো করবোই। পাশাপাশি কাজটাজ করে পয়সাও রোজগার করবো। এখন এসে বুঝতে পারছি পয়সা গাছে ধরে না। আমি বললাম, তোমার কি কখনো মনে হয় না বাড়ি চলে যাওয়া ভাল? এটাতো প্রতিদিনই মনে হয়। কিন্তু কোন্ মুখে ফিরে যাই? আমি তার পিঠে হাত বুলিয়ে দিলাম।

বললাম, এসেই যখন পড়েছো, তখন ফিরে যাওয়ার দরকার নেই। লেগে থাকো। সাকসেস একদিন আসবেই। কাজ খুঁজে ব্যর্থ হচ্ছো, হাল ছেড়ো না। সফলতা আসবেই।

ফেইলিওর ইজ দ্য পিলার অব সাকসেস। মহিউদ্দিন সিরাজ সানি। খুলনা জেলা সদরের মৌলভীপাড়ার ছেলে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে। তারপর খুলনা কমার্স কলেজ থেকে অনার্স করা অবস্থায় চলে এসেছে লন্ডনে।

সেও ভর্তি হয়েছে আইকন কলেজে। এসেছে ২৬ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে। এখনো কোনো কাজ পায়নি। তবে কারো প্রতি তার কোনো ক্ষোভ নেই। অভিযোগও নেই।

যত ক্ষোভ, নিজের প্রতি। আমি জিজ্ঞেস করলাম, লন্ডন কেমন লাগছে? সে বললো, বড়ই কঠিন, রসকসহীন! ভাবলাম, রসে টইটম্বুর এই দেশকে সানি বলছে রসকসহীন!মনে পড়লো সুকান্তকে। তিনি বলেছিলেন, ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়... পূর্ণিমার চাঁদকে মনে হয় যেন ঝলসানো রুটি। সানিকে জিজ্ঞেস করলাম, কঠিন কেন বলছো? সে বললো, কারণ, সহজে কিছু পাচ্ছি না তো। বাবার কাছ থেকে পয়সা এনে খরছ করছি।

এভাবে আর ক’দিন চলবো। আমি বললাম, তোমাকে যদি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণের মতো সেই ছাত্রদের, যারা এখনো স্টুডেন্ট ভিসায় এখানে আসার পায়তারা করছে, কিছু বলতে বলে বলি, তাহলে তাদের উদ্দেশ্যে তুমি কী বলতে চাইবে? সে বললো, আমি তাদেরকে হাত জোড় করে বলবো, দোহাই, তোমরা এসো না। দেশে আছো, ভাল আছো, ভালো থাকো। এখানে কষ্টের সাগরে এসে পড়ো না। তবে কারো যদি বাবার একাউন্টে হিউজ পয়সা থাকে, আর সত্যি সত্যিই পড়ালেখা করার ইচ্ছে থাকে, তবেই এসো।

তা না হলে এসো না। পরিশ্রম করলে দেশে থেকেই লাইফ গঠন করা যায়। আমি তাকে তার দেখা ৪ মাসের লন্ডনকে ব্যাখ্যা করতে বললাম। সে জানালো, এখানে বাঙালি জেনারেশনের অধ:পতন চোখে পড়ার মতো। কালচারাল দেউলিয়াপনা তো আছেই।

তবে শেখার আছে অনেক কিছু। আমি বললাম, শেখার কী আছে? সে বললো, সময়ের প্রতি গুরুত্ব এবং কাজের প্রতি কমিটমেন্ট। খিদমাহ একাডেমিতে রাতে খেতে বসেছি। খাবার মজলিসে দেখা হলো আরো একজন ছাত্রের সাথে। তবে এই ছেলে বাংলাদেশি নয়।

উজবেক ছেলে। তার নাম ফজলে দ্বীন। সে এসেছে উজবেকিস্তান থেকে। দেড় বছর থেকে সে আছে যুক্তরাজ্যে। তাকে বললাম, কেমন আছেন।

সে বললো, ভাল। বললাম, কাজটাজ করছেন কিছু? বললো, হ্যা। কোনো সমস্যা? সে জানালো তার কোনো সমস্যা নেই। সে ভাল আছে। বেশ ভালই আছে- ...ক্রমশ
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।