ডিজিটাল বিয়ে!
প্রিয় বাংলাদেশ থেকে সাত হাজার মাইল দূরে বসে ইন্টারনেটে দেশের পত্রিকা পড়ছিলাম। গ্যাস নেই, পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, ঢাকায় ২বছর ৯ মাস বয়সের শিশু ধর্ষণের ঘটনা, মনটা ভারি হয়ে উঠছিলো। কী হবে এই দেশটার! প্রিয় দেশটি কি কখনো একটু সুন্দরভাবে দাঁড়াতে পারবে না?
গত সপ্তাহে আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী মহোদয় বিলেত ঘুরে গেলেন। তিনি প্রবাসী বাঙালিদের বেশি বেশি করে দেশে বিনিয়োগের নসিহত করলেন। যখন প্রশ্ন করা হলো, জনাব, দেশে কি বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ আছে? পর্যাপ্ত গ্যাস আছে? বিদ্যুৎ আছে? হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে দেশে একটি ইন্ডাষ্ট্রি তৈরি করা হলো।
আপনি কি গ্যারান্টি দিতে পারেন সেখানে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সুবিধা থাকবে?
মাননীয় মন্ত্রীকে তখন বড়বেশি বিব্রত দেখাচ্ছিলো।
কণকণে ঠান্ডার কারণে আজ আর বাইরে বের হইনি। সকালে বৃষ্টি ছিলো। দুপুরে ঠা ঠা রোদ। আর এই পড়ন্ত বিকেলে হীম শীতল ঠান্ডা।
বিলেতে সবকিছু আন্ডার কন্ট্রোল চললেও আবহাওয়ার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। রোদ বৃষ্টির লুকোচুরি খেলা এখানে চলতেই থাকে।
আজকের তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আমার কাছে হাঁড় কাঁপানো ঠান্ডা। অবশ্য বিলেতবাসীর কাছে এটা রীতিমত গ্রীষ্মকাল।
হবারই কথা। যে দেশের তাপমাত্রা মায়নাস ফোর-ফাইভে নেমে যায়, সে দেশে ৬ ডিগ্রি তো খুশি হবার মতোই ঘটনা।
অলস বিকেলটা কাজে লাগাচ্ছিলাম পত্রিকা পড়ে। আজকের পত্রিকায় দু'’টি বিয়ের খবর ছাপা হয়েছে ফলাও করে। প্রথম খবর, অনেক জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে বিয়ে করলেন পাকিস্তানের ক্রিকেট তারকা শুয়েব মালিক এবং ভারতের গ্লামার কন্যা হিসেবে খ্যাত টেনিস সম্রাজ্ঞী সানিয়া মির্জা।
সবচে' চটকদার ও জমজমাট সংবাদটি ছাপা হয়েছে ভেতরের পাতায়। এমন বিয়েকেই ডিজিটাল বিয়ে বলা যায় কিনা-ভাবছি। অন্যদের কথা জানিনা, আমি আমার এই জীবনে এমন বিয়ের কোনো খবর আর শুনি নি।
চট্রগ্রামের রাঙগুনিয়া উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের পটিয়াপাড়া গ্রামের মৃত বাদশা মিয়ার ছেলে আহমদ হুসেন। বেচারার বিয়ের বয়স হয়েছে।
প্রেম করে করে সময় কাটিয়ে আর আরাম পাচ্ছেন না। জানালেন মুরব্বীদের, ‘পার্শ্ববর্তী ইসলামপুর গ্রামের আশরাফ আলীর কন্যা সুমি আক্তারকে বিয়ে করতে চাই’।
দু’'পক্ষের মুরব্বীরা ভাবলেন, বিয়েটা করিয়ে দেয়াই ভাল। আজকালকার ছেলেমেয়ে, কখন কী কাণ্ড ঘটিয়ে বসে বলা যায় না। ধার্য হলো শুভ বিবাহের তারিখ।
৪ এপ্রিল রোববার।
আজ ৪ এপ্রিল। বিয়ের মঞ্চ প্রস্তুত। মহা ধুমধাম করে বরপক্ষ গিয়ে হাজির হলেন কনের বাড়িতে। আমন্ত্রিত অতিথিরাও চলে এসেছেন।
সবাই হাসিখুশি। বরের মুখেও একখন্ড ট্রেডমার্ক হাসি লেগে রয়েছে। রোস্ট-রেজালার গন্ধে কিছু মানুষের জিবে পানি চলে এসেছে। অনেকদিন তারা ভালমন্দ খেতে পায় নি।
ইতোমধ্যেই শরবত পর্ব শেষ হয়েছে।
কিছুক্ষণের মধ্যে কবুল বলা-বলিও শেষ হবে, ইনশাআল্লাহ। তারপর খাওয়া-দাওয়া এবং কনে নিয়ে বাড়ি ফেরা।
মোটামুটি সব আয়োজন সম্পন্ন। উৎসবের আমেজে কোনো কমতি নেই। আর ঠিক তখনই বেরসিক সময় একটি অস্বস্থিকর অথচ মধুর ঝামেলা খাড়া করে দিলো।
দেখাগেল জামাই বাবাজি কামেল আদমী। বিয়ের কন্যা সুমি'র আগে অন্য কারো সাথেও তিনি লটর-পটর করেছেন। ‘তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না’ টাইপের সস্তা সংলাপও বলেছেন। আর সেই সুবাধে এবং বিনা দাওয়াতেই দৃশ্যপটে এসে হাজির হলেন ভাইজানের সাবেক প্রেমিকা বেবি। দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের ঘাগড়া গ্রামের মৃত আফসার উদ্দিনের মেয়ে বেবি আক্তার।
তিনি এসেই বিয়ের ভরা মজলিসে সিংহীর মতো গর্জ্জন করে উঠলেন,
‘এ বিয়ে হবে না। এ বিয়ে আমি হতে দেবো না’
উপস্থিত সবাই মুখ চাওয়া-চাওয়ী করতে লাগলেন। ঘটনা কী? কে এই মেয়ে? কী চায় সে? মাতেব্বর গোছের একজন সামনে এসে মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন,
‘এ্যাই মেয়ে! কে তুমি? কী চাও?’
সে বললো, ‘আমার নাম বেবি আক্তার। ‘ও’ আমাকে ঠকিয়েছে। আমার সাথে দীর্ঘদিন ধরে প্রেম করছে।
আমাকে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখিয়েছে। মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেছে। আমার সাথে ... আর আজ আমাকে ফাঁকি দিয়ে অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে যাচ্ছে। আমার জীবন থাকতে এ বিয়ে আমি হতে দেবো না। ’
উপস্থিত অতিথিবৃন্দ ও মুরব্বীগণ পড়লেন মহা মুশকিলে।
উদ্ভট এই ঝামেলা এখন মেটাবেন কেমন করে। শলা-পরামর্শ চলতে লাগলো। কেউ একজন বললো, এই মেয়ের কথা তো মিথ্যাও হতে পারে। একবার কি ছেলেকে জিজ্ঞেস করার দরকার না?
সবাই বললেন, অবশ্যই দরকার।
জিজ্ঞেস করা হলো বরকে।
এই মেয়ে যা বলছে, তা কি সত্যি? এই মেয়ের সাথে কি তোমার কোনো সম্পর্ক আছে?
জামাই বাবাজি তখন চেপে রাখা রোমাল আরো একটু জোরে চেপে ধরলেন। মুখে কিছু বললেন না। আফটার আল তিনি আজ বিয়ের জামাই। নতুন জামাইদের লজ্জা থাকতে হয়। কথা বলতে হয় না।
তখন এক মুরব্বী, বরের মামা চাচা কেউ হবেন, ধমক দিয়ে বললেন, কথা বলছো না কেন? এই মেয়ে যা বলছে তা কি সত্য?
এবার আর চুপ করে থাকা যায় না। তিনি চোখ নিচের দিকে নামিয়ে মাথাটাকে উপরে-নিচে মৃদু একটি ঝাঁকুনি দিলেন।
মুরব্বীরা পড়লেন আরো গ্যাড়াকলে। মেয়ের দাবি তাহলে সত্য। এখন উপায়? এদিকে যেটুকু জানাগেছে, আজ যে মেয়ের সাথে বিয়ে হতে যাচ্ছে সেই সুমির সাথেও আহমদ ভাইজানের প্রেমের হট কানেকশন ছিলো।
কী করা যায় এখন?
গ্রামের মুরব্বীদের উপস্থিত বুদ্ধি ভাল থাকে। তড়িৎকর্মা মুরব্বীদের উপস্থিত বুদ্ধিতে অবশেষে মুশকিল আসান হলো। সিদ্ধান্ত হলো আহমদ মিয়া যেহেতু দু'টি মেয়ের সাথেই প্রেম করেছেন, অতএব তার শাস্তি হওয়া দরকার। কঠিন শাস্থি। আর এই শাস্তি হলো, দু’জনকেই তাকে বিয়ে করতে হবে এক সাথে।
বেবি বেগমকে জিজ্ঞেস করা হলো, তুমি সন্তুষ্ট কি না?
সে জানালো তার কোনো আপত্তি নেই। সতীন সহ্য করতেও সে রাজি আছে তবুও সে তার ভালবাসার স্বীকৃতি আদায় করতে চায়।
একপক্ষ চলে গেলেন অন্দর মহলে। সেজেগুজে বসে থাকা কনের মতামতও তো জানা দরকার।
তাকে গিয়ে ঘটনা খুলে বলা হলো।
অবশ্য সেটার কোনো দরকার ছিলো না। বাইরের এই হুলোস্থুল অনেক আগেই ভেতরে গিয়ে পৌঁছে গেছে। তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হলো, মুরব্বীদের এই সিদ্ধান্তে সে রাজি আছে কি না? তখন অবধারিত ভাগ্যকে মেনে নিয়ে সেও সম্মতি জানালো।
দু’জনের সাথেই বিয়ে পড়িয়ে দেয়া হলো বরকে।
অতঃপর দু’জনকে বিয়ে করে দুই বউ নিয়ে বীরের বেশে বাড়ি ফিরলেন একুশ শতকের এই ভাগ্যবান জামাই, এই কিংবদন্তি প্রেমিক।
এখন তিনি কেমন আছেন, কেমন চলছে তার সংসার, আমার জানা নেই। তিনি কি সংসার পেয়েছেন নাকি সঙ সার , তাও জানিনা। শুধু ধারণা করছি সুখেই আছেন!
নাহ! তার সুখ বানানটা হবে তালব্য-শ দিয়ে। তিনি শোকেই আছেন বলা যায়।
গ্রেট ব্রিটেন।
আধুনিক সভ্যতার তীর্থভূমি। ওদের ফ্যাক্টরী থেকে কেবল সভ্যতাই উৎপাদিত হয়। মাঝেমধ্যে তাদের সভ্যতার কিছু নিদর্শন প্রকাশিত হয়। আমরা যারা সভ্য হয়ে উঠতে পারি নি, সেই আমরা আতকে উঠি। মনে মনে বলি, ভাগ্যিস, আমরা সভ্য নই।
ব্রিটেনের রাজপুত্র প্রিন্স হ্যারির নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনীর দু’জন যুবক। একজনের নাম জেমস ওয়ারটন, বয়স ২৩। অন্যজন ম্যাক ক্যাফারী, বয়স ২১। দু’জনেই ইরাক যুদ্ধে অনেক মায়ের বুক খালি করে এসেছেন। আর এই এপ্রিলে তারা যে কাণ্ডটি ঘটালেন, সেক্সুয়াল ফ্রিডম এই কান্ট্রিতে এমন ঘটনা এর আগে আর ঘটেনি।
ব্রিটেনের সেনা ইতিহাসে তারা দু’'জন নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করলেন। পরস্পর আংটি পরিয়ে রীতিমতো আনুষ্ঠানিকতা করে বিয়ে করলেন একে অপরকে। মেয়েদের প্রতি আস্থাহীনতা কিংবা অন্য কোনো কারণে মেয়েদের প্রতি ঘৃণার কারণেই তাদের এই সিদ্ধান্ত কিনা-জানা যায়নি। সংবাদটি জেনে আনি মনে মনে বললাম, হায়রে সভ্যতা!!
ব্রিটেনে সমকামিতাকে আইনি বৈধতা দেয়া হয়েছে। ইংল্যান্ডের বিভিন্ন স্থানে ছেলেদের ক্লাব দেখেছি আমি।
তাজুল ভাই আমাকে দেখিয়েছেন। বলেছেন, এই দেখুন, অগুলো ছেলেদের ক্লাব।
আমি বলেছি, ও আচ্ছা।
তিনি বলেছেন, আপনি যেভাবে ও আচ্ছা বললেন, তাতে বুঝা যাচ্ছে ঘটনা আপনি বুঝতে পারেন নি।
আমি বললাম, ক্লাব তো ক্লাবই, ঘটনা আবার কী?
তিনি বললেন, এটা সমকামিতার ক্লাব।
আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলাম।
...ক্রমশ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।