আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিলেতের হাওয়া (২৯)


কুকুরের কাজ কুকুর করিয়াছে... বিলেতে অত্যন্ত মর্যাদা নিয়ে যে প্রজাতি চলাফেরা করে, তাদের নাম কুকুর। কুকুরের খেদমতে সেদেশের মানুষ এমন কিছু নেই যে, করে না। অদেশে কুকুরের জন্যে মানুষ যা করে, আমাদের দেশে মানুষের জন্য যদি মানুষ সেটা করতো!! আমাদের দেশে আমরা সাইনবোর্ড লাগিয়ে রাখি “কুকুর থেকে সাবধান”! বিলেতের অবস্থা একটু ভিন্ন। তারাও সাইনবোর্ড লাগায়। সেখানে লেখা থাকে- Never mind the dog. be war of the owner কুকুর সম্বন্ধে ঘাবড়াবার কিছু নেই।

মালিক থেকে সাবধান। আমি যখন দেশে ফেরার প্রহর গুণছি, তখন, ১৯ এপ্রিল ২০১০ The sun এর পিলে চমকানো একটি প্রতিবেদন দারুণভাবে প্রভাবিত করে তুললো আমাকে। সংবাদটির শিরোনাম- Mum: Help.... Dogs killing my baby... ব্রিটিশ সভ্যতার অন্যতম একটি অংশ হলো কুকুর পালন। ভদ্রলোকের নাম আরফান আহমদ। বয়স ৩২।

কুকুর পালার শখ হলো তার। তিনি একটি কুকুর কিনলেন। আমেরিকান কুকুর। বুলডগ প্রজাতি। বংশ ভাল।

তবে আরফান ভাইজান ভুলে গিয়েছিলেন আমেরিকা রক্ত পিপাসু জাতি। আমেরিকানদের সবচে’ প্রিয় খাদ্য হলো মানুষের রক্ত। রক্তগুলো মুসলমানের হলে ভাল হয়। ওরা সকালের নাস্তা করে ইরাকীদের রক্তে তো দুপুরের লাঞ্চ সারে আফগানী রক্তে। আমেরিকার সিনিয়ার প্রজাতি যেখানে রক্ত পিপাসু, সেখানে ছোটভাইসম জুনিয়াররা, সেদেশের কুকুররা রক্ত ছাড়া আর কী খাবে? আরফান আহমদ’র পাশের ফ্লাটেই থাকেন তার ভাই।

স্বপরিবারে। ভাই’র একটি ছোট্ট বাচ্চা আছে। বয়স ১৮ মাস। নাম জুমার আহমদ। ফুটফুটে একটি মেয়ে।

অবশ্য নাম দেখে প্রথমে আমারও মনে হয়েছিলো ওটা ছেলে। ছেলে ধরে নিয়েই রিপোর্টটিতে চোখ বুলাচ্ছিলাম আমি। এক পর্যায়ে এসে আমার ভুল ভাঙলো। জুমার আহমদ মেয়ের নাম। রিপোর্টটির শেষ অংশে এক পর্যায়ে বলা হয়েছে She was ... ছেলে হলে বলা হতো he was... ঘটনার পূর্ণ বিবরণে জানা যায়, জুমার নামের বাচ্চা মেয়েটি রান্নাঘরে খেলা করছিলো।

বাচ্চাটির মা সায়রা স্ক্রিম (Saira Scream) অন্য রুমে। বাবা বাইরে। সেদিন ছিলো শনিবার। হঠাৎ পাশের ফ্লাট থেকে আরফান চাচার আমেরিকান কুকুরটি এসে ঝাপিয়ে পড়ে জুমারের উপর। সাবেমাত্র ভাঙা ভাঙা কথা বলতে শিখেছে মেয়ে।

সে চিৎকার করে উঠলো, মাম, হেল্প! মাম হেল্প! মেয়ের আওয়াজ শুনে দৌড়ে গেলেন মা। গিয়ে দেখলেন বাচ্চাটিকে মাটিতে ফেলে এলোপাতাড়ি কামড়াচ্ছে কুকুর। চিৎকার করে উঠলেন সায়রা। Help! help! dog killing my baby... বাঁচাও। বাঁচাও।

কে কোথায় আছো, বাঁচাও। কুকুর আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলছে!! সায়রার চিৎকার শুনে পাশের বাসায় সাকিব নাজির (৩২) তার পোলিশ সহকর্মী আফতাবকে নিয়ে ছুটে এলেন। বাকীটা সাকিবের মুখ থেকেই শুনুন। “চিৎকার শুনে দৌড়ে এলাম আমি। সাথে আমার বন্ধু আফতাব।

দু'’জনের হাতে দু'টি পাইপ। গিয়ে দেখলাম, কুকুর বাচ্চাকে এমনভাবে টেনেহেচড়ে নিয়ে যাচ্ছে, যেন মানুষ নয়, কোনো পুতুলকে নিয়ে টানাটানি করা হচ্ছে। মেয়েটি আর চিৎকার করতে পারছে না। সেই শক্তি আর পাচ্ছে না সে। কুকুরটির মুখ থেকে টপটপ করে রক্ত পড়ছে।

তার মুখে ঝুলে আছে বাচ্চা অই মেয়েটির শরীরের চামড়া। আমার সহকর্মী আফতাব পাইপ হাতে তাড়া করলো কুকুরকে। এতে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো কুকুর। সে বাচ্চাকে ছেড়ে তেড়ে আসলো আফতাবের দিকে। আর আমরাও ঠিক এটাই চাইছিলাম।

কুকুরটি যখন আফতাবকে তাড়া করছে, সেই সুযোগে আমি গিয়ে অর্ধমৃত অবস্থায় বাচ্চাটিকে উদ্ধার করলাম। একটি টি টাওয়েল দিয়ে জড়িয়ে নিলাম তাকে। আমার সারা শরীর রক্তে লাল হয়ে গেল। বাচ্চাটি এখন আর গোঙানোর মতো শব্দও করছে না, নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে। বুকে হাত দিলাম আমি।

তখনো আস্তে আস্তে শ্বাস নিচ্ছিলো। বাচ্চাটিকে বুকের সাথে জড়িয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করলাম আমি। এ্যাম্বুলেন্স আসার আগ পর্যন্ত। হাসপাতালে নিয়ে যাবার পর কর্তব্যরত ডাক্তার বাচ্চাটিকে মৃত ঘোষণা করলেন। বাচ্চাকে পোষ্টমর্টেম কক্ষে নিয়ে যাওয়া হলো।

বাইরে তখন জ্ঞান হারিয়ে পড়ে ছিলেন জুমারের বাবা মা। আত্মীয় স্বজন যারা পাশে ছিলেন, তারা চেষ্টা করছিলেন মা বাবাকে শান্তনা দিতে। পুলিশ কুকুরটিকে ধরে নিরাপদ হেফাজতে রেখেছে। কুকুরের মালিক আরফান আহমদকেও গ্রেফতার করেছে। ব্রিটেনে কুকুরের এই আক্রমণ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।

মাঝে মধ্যেই এমন বীভৎস সংবাদ শুনা যায়। তবুও তাদের কুকুর প্রীতি কমে না। কমবেও না। তাদের সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন হলো কুকুর পালন। ভাগ্যিস আমরা সভ্য নই!! ...ক্রমশ
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।