ব্রিটেনে দুর্নীতি
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো দুর্নীতি। আর তারচেও বড় ব্যাপার হলো দুর্নীতি করে পার পেয়ে যাওয়া। ব্রিটেনকে বলা হয় মাদার অব ডেমোক্রেসি। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, ব্রিটেনে দুর্নীতি নেই। দুর্নীতি ওখানেও আছে।
তবে সেদেশের দুর্নীতি ও আমাদের দেশের দুর্নীতির মধ্যে গুণগত পার্থক্য হলো, আমাদের দেশে দুর্নীতি করলে এবং খুটির জোর থাকলে কিছুই হয় না কিন্তু ওখানে দুর্নীতি করলে, সে যেই হোক, পার পাওয়ার সুযোগ নেই।
১৫ মার্চ ২০১০ ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির দায়ে ক্ষমতাসিন লেবার পার্টির তিন তিনজন সাবেক মন্ত্রীকে পার্লামেন্টারী কমিটি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এরা হলেন, যোগাযোগ মন্ত্রী স্টিফেন বায়ার্স, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জিওফ হুন এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্যাট্রিসিয়া হিউইক। বরখাস্ত তালিকায় তাদের সঙ্গী হয়েছেন সংসদ সদস্য মর্গারেট মোরান।
অর্থের বিনিময়ে নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে আমেরিকার একটি লবিং কোম্পানীর পক্ষে সরকারের মনোভাব ও সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার আগ্রহ প্রকাশের বিষয়টি প্রকাশিত হয়ে পড়লে লেবার পার্টি তাদের বিরুদ্ধে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়।
ফলে তারা পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে (যা ইতোমধ্যেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে) অংশ নিতে পারবেন না। তাদের অপরাধ খতিয়ে দেখার জন্য তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
জানা গেছে, কয়েকজন সাংবাদিক পরিচয় গোপন করে বৈঠক বসেন অই উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সাথে। আলোচনার ফাঁকে তাদের পেটের ভেতর থেকে কথা বের করে নিয়ে আসেন। সাংবাদিকদের পাতানো জালে পা দিয়ে সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী বায়ার্স বলেন, সরকারি নীতিকে প্রভাবিত করার জন্য তাকে দৈনিক ৫ হাজার পাউন্ড দিতে হবে।
উল্লেখ্য যে, আমেরিকান যে কোম্পানীর জন্য কাজ করতে যাচ্ছিলেন তারা, সাংবাদিকদেরকে তাদেরই এজেন্ট ভেবে সবকিছু আলোচনা করে বসেন। সাংবাদিকদের সাথে থাকা রেকর্ডার ও ক্যামেরায় রেকর্ড হয়ে যায় সবকিছু। এর আগে অই নেতারা যখন যুক্তরাষ্ট্রের অই লবিং প্রতিষ্ঠানের সাথে গোপন বৈঠক করছিলেন, তখন বৈঠকে থাকা অবস্থায়ই তারা বন্দি হয়ে যান ‘চ্যানেল ফোর’ এর ক্যামেরায়।
ব্রিটেনের রাজনীতিতে এটাই দুর্নীতির প্রথম খবর নয়। দুর্নীতির খবর প্রায়ই প্রকাশিত হয়।
তবে ভাল দিক হচ্ছে দুর্নীতি করলে কেউ ছাড় পায় না।
২০০৯ সালে ৮জন এমপিকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হতে হয়েছিলো। তাদেরকে পদত্যাগে বাধ্য করেছিলো ব্রিটিশ মিডিয়া। ব্রিটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা ‘দি গার্ডিয়ান’ MP expance claim, শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে থলের ভেতরের অনেক বেড়াল।
যেখানে শতাধিক এমপির খরচের হিসাবও প্রকাশ করা হয়।
তাতে দেখা যায়, অধিকাংশ এমপি তাদের দৈনন্দিন জীবনের সকল খরচ সরকারি কোষাগার থেকেই নিয়েছেন। এমন কি ৫০ পয়সা মূল্যের একটি চকলেট খেলেও সেটার বিল করে উঠিয়ে নিচ্ছেন, বউ বা বান্ধবীকে নিয়ে বিনোদনের সিডি দেখেছেন, সেটাও সরকারি পয়সায়।
অবশ্য গার্ডিয়ানের রিপোর্টের পর সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে সাথে সাথে। অভিযুক্ত ৮ জনকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছে।
বাকীদের সতর্ক করেছে। এবং এরপর এমপিদের সকল হিসাব ওয়েবসাইটে দিয়ে দিয়েছে যাতে দেশের মানুষ সেটা দেখতে পারে।
আমাদের দেশের সব সরকারই ক্ষমতায় যাবার আগে বলে, মন্ত্রী- এমপিদের সম্পদের হিসাব জাতির সামনে থাকবে। ক্ষমতায় যাওয়ার পরে প্রথম প্রথম কয়েকদিন এই বেমার থাকে। মাঝে-মধ্যে বলা হয় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য হিসাব দেয়া হবে।
কিছুদিনের মধ্যে এই অসুখ সেরে যায়। তখন আর হিসাবের কথা কেউ মুখেও আনেন না।
ব্রিটেনে দুর্নীতি আছে ঠিক। তবে সবচে’ বড় কথা হলো আইনের শাসন আছে। আর এর পেছনে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখে মিডিয়া ও হিউম্যান রাইটস সংস্থাগুলো।
সেদেশে মানবাধিকার সংগঠনগুলো খুবই ষ্ট্রং। পান থেকে চুন খসলেই তারা চেপে ধরে। কোনো ছাড় দেয় না।
...চলবে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।