আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উদাসীর বগুড়ীয় ফাল!

আসেন দুর্নীতি করি। আর এই দুনিয়াটাকেই খুচাই!

অনেকক্ষন ধরে দাড়িয়ে আছি পর্যটন হোটলটার সামনে। গায়ে একটা ব্লেজার চড়িয়ে, চারিদিকে হালকা ঝাজের সোনালী রোদ। মেজাজটা খারাপ কারন এই শহরে রোডম্যাপের আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছি না, বাট হোয়াট এভার!গাড়িতে ঘুরে মজা নেই! হাক ছাড়লাম রিক্সাটার দিকে, শুধালাম,"সাত মাথা!" রিক্সা চলতে থাকলো। আমি চারিদিকে তাকালাম, চেস্টা এ শহরের ইউনিক জিনিসটা কি সেটা জানবো! প্রথমে নেমেই আমার প্রশ্ন ছিলো বগুড়ার দেখার কি আছে? জবাব ছিলো,"কি নেই?" তবে তা সবই পুরাতাত্বিক! আমার রিক্সা এগিয়ে যায়।

সাত মাথা এসে রিক্সা দাড়াতেই বললাম,"সোজা যেতে থাকো!" রিক্সা ওয়ালা পিছনে তাকালো একবার, তারপর চালানো শুরু করলো। যেতে যেতে দেখলাম রাস্তার বা পাশে একটা উচু বিল্ডিং প্রায় ৮ তলা হবে। মনে পড়ে গেলো পুরোনো একটা স্মৃতি। ২০০৫ সালের মার্চের দিকে হবে হঠাত হোয়াওয়ের দিদার ভাই আমাকে আর শুভ্র ভাইকে ডেকে বললো,"বড়ো একটা কাজ আছে তোমাদের জন্য। র‌্যাংকসটেলের সুইচ রুম ডিজাইনরুম করতে হবে র‌্যাংসটেলের জন্য।

সাথে থাকবে র‌্যাংসটেলের ইন্জিনীয়ার তরিকুল ইসলাম। গিয়ে সার্ভে সেরে আসো আর রিকোয়্যারমেন্ট জেনে আসো। " কথা শেষ হবার সাথে সাথেই বিলওকিউ ধরিয়ে দিলো। আমরা দুজনেই এক্সাইটেড। বগুড়ায় পৌছেই উঠি এ বিল্ডিংএর মগডালে।

তখনই হাজির হয় বাড়ীওয়ালা। বাড়িওয়ালা আমাদের পরিচয় জেনেই গদগদ। সে নিয়ে গেলো তার বাসায়। তারা থাকতো ঐ বিল্ডিংএর ৪ তলায়। বিল্ডিংটার ৭ আর ৮ তলা তখনও আন্ডার কন্সট্রাকশন যার একটা র‌্যংসটেলের কাছে আর আরেকটা বোধহয় বাংলালিংকের কাছে ভাড়া দিয়েছে।

আমরা তিনজনে তার বাসার ভিতরে ঢুকেই চোখ চড়ক গাছ। কিছু ক্ষনের জন্য মনে হলো আমরা দেশে নাই। হয়তো কোনো বিদেশী বাসায় এসে পড়েছি। মেঝেতে মার্বেলের পাথর দিয়ে বাধানো। রুম গুলো ১০ ফুটের জায়গায় ১৫ ফিটের হাইট।

বিশাল ডাইনিং রুম পেরিয়ে যখন ড্রইং রুমে পৌছলাম তখন দেখলাম একটা স্টেজের মতো করা পশ্চিম দিকে, মেঝেটা পুরো টাইলস দিয়ে বাধানো আর মাথার উপর দিয়ে বেশ কয়েকটা বিদেশী ঝাড়বাতী। এই গ্রীষ্মপ্রধান দেশের বিল্ডিং এ ফায়ার প্লেস পূর্বদিকে। ড্রইং রুমের এক দিকে বাদ্যযন্ত্র, মনে হয় এখানে মাঝে মাঝে গানের আসর বসে। এক কর্ণারে ৫ তলায় যাবার জন্য একটা রাউন্ড সিড়ি আর ওপর থেকে বারান্দার মতো করে রেলিং দেয়া যাতে করে ৫ তলা থেকেই দেখা যায় ৪ তলার ড্রইং রুমে কি হচ্ছে না হচ্ছে!মনে হলো উপরে সব ড্রইং রুম! আমাদের সোফায় বসতে বলে চলে গেলো ল্যান্ডলর্ড। আমি তরিক ভাইকে বললাম,"বস, কোথায় আসলাম?" -আমিও জানিনা! -তারেক ভাই এর বগলের দোস্ত মনে হয়? -হইতে পারে! এমন সময় একটা সোনালী ট্রেতে বিশাল ব্যাবস্হার খানাপিনা।

আমার মনে হলো নাজ গার্ডেনের লান্ঞ্চটা বোধহয় হুদাই করলাম! অবশ্য যে নিয়ে আসলো সে খুবই সুন্দর ছিলো। লাল ড্রেসে খুব সুন্দর মনে হলো। মনে হয় ল্যান্ডলর্ডের মেয়ে। আমার তো চোখ ছানাবড়া মেয়েটার এত গ্লেসী সাজগোছ দেখে!অবশ্য গলায় আমি অনেক আগেই হোয়াওয়ের কার্ড ঝোলানো!ভাবলাম এবার একটু ভাব নেই। কিন্তু নাস্তা সার্ভ করে মুখে আমাদের দিকে 'হাই' বলে মুচকি হাসি দিয়েই চলে গেলো! এমন সময় বাড়ীওয়ালা ভদ্রলোক এসে আমাদের সাথে বসলো এবং খেতে বললো।

আমরা তখন না খেয়ে কাজের আলাপ করতে লাগলাম। মেইন কথা হলো পাওয়ারের জন্য অনুমতী, জেনারেটর স্পেস, লিফট এ্যরেন্জমেন্ট এবং সবচেয়ে মেইন যে জিনিসটা সেটা হলো বিল্ডিং এর লোড ক্যাপাসিটি! আমরা তারপর ৭ তলায় উঠে পুরো ফ্লোরের মাপঝোক নিলাম এবং তরিক ভাই এর কাছ থেকে তাদের অফিসিয়াল রিকোয়্যারম্যান্ট জানলাম মানে সুইচরুমের কোথায় কি বসবে!আমাদের মেইন কনসার্ন ছিলো সুইচ রুম আর লিংকের ব্যাপারে। সেজন্য শুভ্র ভাই তার যাবতীয় কথাবার্তা শেষ করে আমরা রাতে উপশহর থেকেছিলাম। এই বিল্ডিংটা এত দিন পর চোখে পড়ে যাওয়ায় সেদিনগুলোর কথা বেশ মনে পড়লো। প্রতি সপ্তাহে ঘুরে বেড়াতাম গাড়ী নিয়ে দক্ষিণ থেকে উত্তর বঙ্গ টেলিকম অপারেটরদের বিএসএস, এমএসসি সুইচরুমের ডিজাইন, সার্ভে আর ট্রাবলসুটিং এর কাজে।

এদিকে রিক্সা আমাকে নিয়ে এসে পড়েছে নাজ গার্ডেন দিয়ে সোজা শহরের বাইরে। চোখে পড়লো শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ। ফাটাফাটি ম্যান, ইটস ওসাম! মনে হলো আবারও ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে এখানে চান্স নেই। এমন সময় রিক্সাওয়ালাকে ঘুড়াতে বললাম পর্যটন হোটেলের দিকে ফিরে যেতে কারন ফোন এসে গেছে আবার মহাস্হান বাজার যেতে হবে ল্যাপটপ আর মোবাইল টেমস নিয়ে। হোটেলের দিকে যখন যাচ্ছিলাম, তখন চোখে পড়লো হোটেলের ওপজিটে কলেজের সামনে দুজন মেয়ে দাড়িয়ে।

দেখে মনে হলো রিক্সা খুজছে। আনফরচুনেটলি তারা রিক্সা পাচ্ছে না। আমি তাদের সামনে রিক্সা থামালাম। তারা তাকিয়ে আছে আমার দিকে। হঠাত বলে বসলাম,"আপনাদের রিক্সা লাগবে?" -কেন আপনি কি রিক্সা সাপ্লাই দেন নিকি?(সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটা বলে বসলো, বয়স হবে আনুমানিক ২০ কি ২২!) আমি একটু থতমত খেয়ে গেলাম প্রথমে, তারপর নিজেকে সামলিয়ে বললাম,"রিক্সা সাপ্লাই দেই না, তবে হেল্প সাপ্লাই দেই।

কিন্তু বগুড়ার মানুষরা বোধ হয় কাউকে বন্ধু হিসেবে ভাবে না বলেই হেল্প পায় না!" তারা ফিক করে হেসে দিলো। এমন সময় পাশ দিয়ে একটা খালি রিক্সা যাচ্ছিলো আর ঐ দুজনের একজন তাকেই ডেকে বসলো। রিক্সাটা থামাতেই দেখি তারা দুজন রিক্সায় উঠলো। আমি হতাশ হয়ে বসে বসে দেখলাম ভাবলাম একটা উত্তর হয়তো পাবো। কিন্তু রিক্সায় উঠেই তারা দুজন খিল খিল হাসা শুরু করলো আর রিক্সা আমার সামনে ঘুরাতেই দেখি সেই সুন্দর মেয়েটা একটা চোখ টিপ মেরে চলে গেলো! হয়তো এটাই উত্তর ছিলো তার! গড ডেম ইট!


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.