আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিপ্রতীপ ....!

আমি অন্যকিছু নই, আমি সবাই...। বেশ কিছু বছর আগের কথা। ২০০৬ সাল। ২০০৫-এ ঢাকা ইউনিভার্সিটি তে চান্স না পেয়ে ২য় বার চেষ্টা। মোটামুটি সকল রকম সামাজিক এবং পারিবারিক যোগাযোগ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে তালতলার অনেক ভেতরে ছোট একচালা এক ঘড়ে ৯ টি মাস।

খুব অদ্ভুত এক অনভুতি হত যখন ঘুম ভেঙে উঠে কিছু-ই করার মত থাকতো না। ঘুম ভেঙে চোখ খুলে টিনের চালের খুব কাছাকাছি এক খানের ছোট্ট এক জানালা থেকে খুব সরু একটা আলোর রেখা দেখতে দেখতে অনেক খানি সময় কাটিয়ে দিতাম। বিকেলবেলা তালতলার ভেতরের কোয়ার্টার গুলোর আবর্তনে একাকী হাঁটাহাঁটি করা ছারা আর কিছু করার মত পেতাম না। ছোট থেকেই অসামজিক হিসেবে সুখ্যাতির কারনে কারো সাথে মিশতে ও পারতাম না খুব সহজে। সহজ একটা সমিকরন দিয়ে ব্যাপারটাকে আরো বিশ্বাসযোগ্য করার চেষ্টা করছি- দীর্ঘ ৯ মাসে পাঁশের রুমের কারো সাথে একটু হাসি বিনিময়-ও হয়নি একবারের জন্য-ও।

কিন্তু একা একা থাকতে থাকতে কেন যেন অস্থির হয়ে গেলাম। এরই মাঝে এক দিন আমার এক আত্মীয় ফোন দিয়ে দেখা করতে চাইল । দেখা করার সময় আমার সত্তি মনে আছে ওটা আমার ৭ম দিন ছিল কারো সাথে একটি-ও কথা না বলে থাকার। একা একা থাকতে থাকে যখন একেবারে বেশী খারাপ লাগতো সপ্ন দেখতাম একদিন আমার সাথে অনেক মানুষ থাকবে,কখনো একা থাকতে হবে না একদিন। সপ্ন সত্যি হয়ে গেল।

বছরখানেক বাদেই আমি ব্রাক ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হবার পর আমার খুব ভালো কিছু বন্ধু হল,অনেক মানুষের সাথে মিসতে হোল,তার-ও কিছু বছর পর হৃদয়ঘটিত সম্পর্কে সংযুক্ত হলাম এবং একসময় হুলহুস্তুল করে বিয়ে-ও করে ফেল্লাম, আমার একটা চাকরী-ও হল যেখানে কিনা আমার চারিপাশে অনেকগুলো হাশিমুখ এবং প্রিয়মুখ সবসময়-ই বিচরণ করে। এখন ২০০৬ সালের সৃতি সত্যিকার অর্থে -ই ভুলে যাবার মত অবস্থা। দিন শুরু হয় বউ,কাজের বুয়া এবং ছোট ভাইয়ের মুখ দেখে, অফিসের সময়টা কেটে যায় অনেকগুলো নতুন মুখের সাথে পরিচয় হতে হতে এবং পুরনো কিছু মুখের সাথে মুখরায় মেতে উঠে। অফিস শেষে দৌড়ঝাঁপ দিয়ে বাসায় গিয়ে পরিবারের সবার সাথে গল্প করে ঢুলু ঢুলু নয়নে বিছানায় যাই। দিনের শুরু থেকে একেবারে শেষ পর্যন্ত এক মুহূর্তের জন্যেও আমারে আর একা থাকতে হয় না।

চোখ ভিজে আসার মত আনন্দ...!! সবকিছু ঠিক -ই ছিল। হটাৎ -ই একদিন কি যেন কি হল মনে হতে থাকল , আমি নিজের কাছ থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছি ধীরে ধীরে। আমি কেন যেন নিজের কাছে আর নিজের মত থাকতে পারছি না, হয়ত পারছি,হয়ত বা অন্যকিছু...!! সব কিছু-ই ঘোলাটে লাগতে লাগলো সেই রাত্রির ঘুমহীন হলুদ চোখে...!খুব বেশী কেন যেন মনে পরতে থাকলো ২০০৬ সাল, একাকী থাকা অস্থির হওয়া সেই সময়গুলো...!! ২০০৬ , একান্ত নিজের সময়, নিজের সাথে কথা বলার বছর, নিজের জন্য গান লেখার বছর, গান গাওয়ার বছর...দুঃসপ্নের রাত গুলোকে নতুন এক সকালে পরিণত করার বছর, নিজেকে প্রতিনিয়ত চেনা, নিজেকে প্রতিনিয়ত ভাঙার বছর। খুব বেশীক্ষণ স্থির থাকতে পারলাম না, বাসা থেকে অফিস যাবার কথা বলে চলে গেলাম তালতলা। এই কয়েকবছরে সব কিছু খানিকটা পাল্টে গেছে, যেমনটা পাল্টানোর কথা।

কিন্ত আমার ঐ বাসাটার কাছে গিয়ে দেখলাম বাসাটা নেই। ওইখানে নতুন এক দালান উঠছে। এখন কেন যেন অনেক মানুষ আমার চারিপাশে, অনেক প্রিয়, অনেক অপ্রিয়। বেশিরভাগ সময়ে ব্যস্ত থাকি অপ্রিয় মানুষগুলোর সাথে অভিনয় করতে করতে...!এত মানুষের সাথে কথা বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। অনেক একা থাকার চেষ্টা করে-ও কেন যেন আধ ফোঁটা সময়-ও খুজে পাইনা নিজের জন্য।

এখনো জ্যোৎস্না রাতে চাঁদ উঠে আগের মত কিন্তু এখন আর জ্যোৎস্নাতে নিজের চেয়ে_ও বড় নিজের ছায়াটা কে দেখার সুযোগ হয়না। প্রচণ্ড রোদের ভেতর অলস দুপুরে একেবারে একা বসে বসে গল্পের বই_ও আর পরা হয় না। অনেক চোখের ভিড়ে নিজের চোখগুলকে-ও মাঝে মাঝে অচেনা মনে হয় ইদানীং। হয়ত একা থাকা দরকার ...। সবকিছু থেকে হয়ত খানিকটা দূরে..., সব সময়ের জন্য না হলে-ও কিছুটা সময়ের জন্য...!! কি করব মানুষ তো ইচ্ছেশীল প্রানী...মাত্র ৬ বছর আগে যেটাকে ভয় পেতাম আজ সে টার জন্য-ই লিখছি...।

!! বিপ্রতীপ জীবন...!!! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।