টাকা জমছে ব্যাংকে আর উড়ছে বাজারে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে মন্দা পরিস্থিতির কারণে ব্যাংকে ও ব্যাংকের বাইরে টাকার সরবরাহ বেড়েছে। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে মুদ্রাবাজারে নগদ টাকার সরবরাহ বেড়েছে ১২ হাজার কোটি। অর্থাৎ জুলাই-২০১২ থেকে জুলাই ২০১৩ পর্যন্ত এই সমপরিমাণ টাকা মানুষ ব্যাংক থেকে উত্তোলন করেছে। কিন্তু পরে তা আর ব্যাংকে জমা করেনি। ব্যাংকে টাকা জমার কারণ হচ্ছে বিনিয়োগে স্থবিরতা। আর বাজারে টাকা ওড়ার কারণ হচ্ছে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি।
একদিকে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ায় ব্যাংকে সঞ্চিত অর্থ তুলে নিচ্ছে মানুষ, এ অর্থই চলে যাচ্ছে বাজারে। অন্যদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অবকাঠামো সংকটে বিনিয়োগযোগ্য অর্থ ব্যাংকে পড়ে থাকছে মাসের পর মাস। ফলে ব্যাংকেও অলস টাকার পাহাড় জমছে। চলতি সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যাংক খাতে অলস টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৪ হাজার ৫২০ কোটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে অলস টাকা বেড়েছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি।
ব্যাংকের বাইরে টাকার সরবরাহ বাড়া মানেই মানুষের হাতে টাকার সরবরাহ বেড়ে যাওয়া। বাজারের অতিরিক্ত টাকার সরবরাহ মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মানুষের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা কাজ করছে। ফলে নতুন করে কেউ বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। অন্যদিকে ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি জেঁকে বসায় এ খাতে মানুষের আস্থা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। ফলে ব্যাংকের পরিবর্তে নিজের হাতেই টাকা গচ্ছিত রাখা বেশি নিরাপদ মনে করছে সাধারণ মানুষ। এ ছাড়া ২০১০ সালে শেয়ারবাজারের উত্থানের সময় অনেক বেশি টাকা মানুষের হাতে চলে এসেছিল। তার একটি বড় অংশ এখনো ব্যাংকে ফেরত যায়নি। আবার এমনও হতে পারে, অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে জালিয়াত চক্র ব্যাংক খাত থেকে যে টাকা তুলে নিয়েছে এর সিংহভাগই ব্যাংকে ফেরত আসছে না। ফলে ওই টাকা কারও না কারও হাতেই রয়ে গেছে। আবার উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে চাইলেও অনেকে ব্যাংকে অর্থ রেখে দিতে পারছে না। খেয়ে-পরে বাঁচতে আগের তুলনায় অনেক বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। অনেক মানুষই এখন ব্যাংকে টাকা রাখতে চাইছে না। নানা ধরনের অনিশ্চয়তা ও অস্বস্তি কাজ করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনের (সেপ্টেম্বর) তথ্যমতে, জুলাই-২০১৩ পর্যন্ত ব্যাংকের বাইরে অর্থাৎ মানুষের হাতে ৭২ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা রয়েছে। মাত্র তিন মাস আগেও এর পরিমাণ ছিল ৬৬ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। আর এক বছর আগে অর্থাৎ জুলাই-২০১২-এ মুদ্রাবাজারে ৬০ হাজার ২৯৩ কোটি টাকার সরবরাহ ছিল। এক বছরের ব্যবধানে বাজারে ১২ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা ব্যাংকের বাইলে চলে এসেছে, যা আর ব্যাংকে জমা হয়নি। সামনে ঈদুল আজহার কারণে মানুষের আরও বেশি নগদ টাকার প্রয়োজন হবে। ফলে আগামী মাসে মানুষ ব্যাংক থেকে অনেক বেশি টাকা উত্তোলন করবে। তখন মুদ্রাবাজারে নগদ টাকার প্রবাহ আরও বাড়বে, যার প্রভাবে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১১ সালের মাঝামাঝি এভাবে হঠাৎ করে বাজারে টাকার প্রভাব বেড়ে যায়। ফলে সে বছর মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘর অতিক্রম করে। এমনকি পরের বছরও সে ধারা অব্যাহত থাকে, যা ছিল এক দশকের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সবার মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা কাজ করছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা অনেক ভেবেচিন্তে বিনিয়োগ করছেন। এ ছাড়া গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের কারণেও বিনিয়োগে অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। তহবিলের পরিমাণ বাড়ছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা না কাটলে ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চাইবেন না। আর মুদ্রাবাজারে টাকার সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে যে টাকা ব্যাংকের বাইরে গেছে তা ফিরে আসেনি। এটি একটি কারণ হতে পারে। এ ছাড়া মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়াতে অনেকেই ব্যাংকের জমানো টাকা তুলে নিচ্ছেন এটাও হতে পারে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।