আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সর্বাধুনিক পদ্ধতিতে পাইলস চিকিৎসা

আমি মিথ্যাকে, অন্যায়কে সহ্য করতে পারি না । তাই আমি স্পষ্টবাদী

জীবনে কম বেশি পাইলসের সমস্যায় ভোগেননি এরূপ লোকের সংখ্যা খুব কম। পাইলস বলতে আমরা বুঝি মলদ্বারে রক্ত যাওয়া, ব্যথা হওয়া, ফুলে ওঠা, মলদ্বারের বাইরে কিছু অংশ ঝুলে পড়া আবার ভেতরে ঢুকে যাওয়া ইত্যাদি।

এর চিকিৎসা হিসেবে আদিকাল থেকে বিভিন্ন পদ্ধতি চলে এসেছে যেমন ইনজেকশন পদ্ধতি, রিংলাইগেশন পদ্ধতি এবং অপারেশন। ইনজেকশন পদ্ধতি ১৮৬৯ সনে আমেরিকায় শুরু হয়।

এ পদ্ধতিটি প্রাথমিক এবং ছোট পাইলসে ভাল ফল দেয় কিন্তু সফল দীর্ঘস্থায়ী হয় না। এরপর ১৯৬২ সালে ইংল্যান্ডে রিংলাইগেশন পদ্ধতি আবিষ্কার হয়। রিংলাইগেশন পদ্ধতির ফলাফল খুব ভাল। ৮০-৯০ ভাগ পাইলস রোগী এ পদ্ধতিতে ভাল হন। কিন্তু শতকরা ১০-২০ ভাগ রোগীর অপারেশন প্রয়োজন।

বিশেষ করে যাদের পাইলস বড় হয়েছে এবং বাইরে বেরিয়ে আসে। এ অবস্থায় প্রচলিত আধুনিক পদ্ধতিতে আমরা অপারেশন করে থাকি।

এ অপারেশনে মলদ্বারের চতুর্দিকে তিন জায়গায় বেশ কিছু জায়গা কেটে ফেলে দিতে হয়। যার ফলে অপারেশনের পর প্রচুর ব্যথা হয়, মলত্যাগের পর ব্যথা বেড়ে যায়, অনবরত সামান্য রক্ত ও পুঁজের মত নিঃস্বরণ হয়। যার ফলে ক্ষতস্থান শুকাতে ১-২ মাস সময় লাগে।

অফিস থেকে কমপক্ষে একমাস ছুটি নিতে হয়। অপারেশনের পর ক্ষেত্রভেদে মলদ্বার সংকুচিত হয়ে জীবন দুর্বিসহ করে তোলে আবার পায়খানা আটকিয়ে রাখার ক্ষমতা ব্যহত হতে পারে।

এরূপ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে রোগীকে এক থেকে দেড় মাস কাটাতে হতে পারে। মলদ্বারের চতুর্দিকের মাংস কাটার জন্য মলদ্বারের ভেতরের অনুভূতি কমে যায়। যার জন্য মল আটকে রাখার ক্ষমতার তারতম্য হতে পারে।



এহেন প্রেক্ষাপটে অধ্যাপক ডাঃ এন্টনিও লংগো, অধ্যাপক সার্জারি, ইউনিভার্সিটি অব প্যালেরমা, ইটালি ১৯৯৩ সালে একটি অত্যাধুনিক পদ্ধতি আবিষ্কার করেন যার নাম Longo Operation বা Stapled Haemorrhoidectomy. অর্থাৎ অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে মলদ্বার না কেটে পাইলস অপারেশন।

এ পদ্ধতির কনসেপ্ট বা চিকিৎসার দর্শন যুক্তি সম্পূর্ণ আলাদা। এক্ষেত্রে পাইলসটিকে একটি ঝুলেপড়া মাংসপিন্ড হিসেবে মনে করা হয়। এই ঝুলে পড়া মাংসপিন্ডের ভেতর অসংখ্য শিরা মলত্যাগের সময় প্রচন্ড চাপে রক্তপাত ঘটায়। বিশেষ ধরনের যন্ত্রের সাহায্যে অপারেশনের ফলে ঝুলেপড়া পাইলস ভেতরে ঢুকে যাবে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে এ পদ্ধতিতে আসলে পাইলসের স্থানে বা মলদ্বারে কোনো কাটা ছেড়া হয় না। স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের সাহায্যে কাটা ছেড়া করে ঐ যন্ত্রটিই আবার সেলাইও সেরে দেয়। যার কারণে কোনো ক্ষতস্থান থাকে না। আর ক্ষতস্থান থাকে না বলে শুকাবার প্রশ্ন আসে না। মলদ্বারের অনেক গভীরে যে স্থানটির নাম রেকটাম সেখানে কোনো ব্যথার অনুভূতি নেই।

তাই এই অপারেশনের পর কোনোরূপ ব্যথা হয় না। তবে মলদ্বারে কিছু নাড়াচাড়া করা হয়, যার ফলে অপারেশনের পর অল্প ব্যথা হতে পারে।

এ পদ্ধতিতে পাইলসের উৎপত্তিস্থল অর্থাৎ রেকটামের ভেতর অপারেশেনের ফলে পাইলসের রক্ত সরবরাহের শিরাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এ পদ্ধতিতে গঠনগত দিক থেকে মলদ্বার সম্পূর্ণ অক্ষত থাকে। মলদ্বারা সামান্যতম কোন কাটা ছেড়া নেই।

এটিই এই অপারেশনের নতুন দিক। যার কারণে অপারেশনের পর প্রচন্ড ব্যথা নেই। রক্ত বা পুঁজ পড়ার সমস্যা নেই। ক্ষতস্থান শুকাবার জন্য দেড়মাস সময় দরকার নেই। মলদ্বার সরু হয়ে যাওয়ার সমস্যা নেই।

দীর্ঘদিন ব্যথার ঔষুধ ও এন্টিবায়োটিক খাওয়ার প্রয়োজন নেই। দীর্ঘদিন বিশ্রাম বা ছুটি নেয়ার প্রয়োজন নেই। পায়খানা আটকে রাখার ক্ষমতা ব্যহত হওয়ার ভয় নেই। সর্বোপরি আবার পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা অতি সামান্য অর্থাৎ শতকরা ২ ভাগ।

এ অপারেশনে অজ্ঞান করা হয় না তবে কোমরের নিচের দিক অবশ করা হয়।

অপারেশনের জন্য রোগীকে ২-৩ দিন হাসপাতালে থাকতে হয়। একটি অত্যাধুনিক বিশেষ ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করতে হয় যেটি কিছুটা ব্যয় বহুল। কিন্তু এ পদ্ধতির সুবিধাগুলো পর্যালোচনা করলে প্রায় সব রোগীই এতটুকু ত্যাগ স্বীকারে রাজী হবেন। ৫-১০ দিনের মধ্যে রোগী স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারবেন। অন্যদিকে সাধারণ অপারেশন হলে রোগীকে এক থেকে দেড়মাস ছুটি নেয়া লাগতে পারে।



বিগত নয় বৎসর যাবত আমরা মলদ্বারের চিকিৎসা করে আসছি এবং এ পর্যন্ত ২৯৬৩৫ রোগীর চিকিৎসা ও অপারেশন করেছি। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়ায় এ রোগের উপর বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছি। আমাদের দেশের রোগীরা ২০-৪০ বৎসর পাইলস নিয়ে ভোগেন কিন্তু অপারেশনের পরের যন্ত্রণার কথা ভেবে ভয়ে কোনো ডাক্তারই দেখান না।

বিগত ৮ জুন ২০০৩ সালে আমি প্রথম এই অত্যাধুনিক অপারেশন সাফল্যের সাথে বাংলাদেশে সম্পাদন করি। এরপর বিগত দুই বৎসরে আমরা এ জাতীয় কয়েক শত অপারেশন করে খুবই ভাল ফলাফল পেয়েছি।

অল্প কিছু রোগীর সামান্য সমস্যা হয়েছে।

জনৈক রোগী অপারেশনের পর তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন- স্যার বিশ বৎসর ভয়ে অপারেশন করলাম না। এখন মনে হচ্ছে এটি কোনো অপারেশনই না। আত্মীয় স্বজন বলেন, তোমার কি আসলেই অপারেশন হয়েছে? কোনো ব্যথা নেই, রক্ত পড়া নেই, গরম পানির সেক দেয়া নেই ইত্যাদি। বিদেশে যেখানে এ জাতীয় অপারেশনে কয়েক লাখ টাকা খরচ হবে সে তুলনায় আমাদের দেশে খরচ অত্যন্ত সীমিত।

আমি মনে করি সব মধ্যবিত্তের আওতায় থাকবে।

রোগীরা পাইলস অপারেশন করতে চান না কয়েকটি কারণে যেমন অপারেশনের পর মলত্যাগে ব্যথা হওয়া, ঘা শুকাতে দীর্ঘদিন লাগা, দীর্ঘদিন বিশ্রাম নেয়া প্রয়োজন, পায়খানা আটকে রাখার ক্ষমতা ব্যহত হওয়ার ভয়, মলদ্বার সরু হয়ে যাওয়ার ভয় এবং পাইলস আবার হওয়ার ভয় ইত্যাদি। এ পদ্ধতিতে এ জাতীয় সব সমস্যার পূর্ণ সমাধান রয়েছে।

অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুল হক
বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ
সাবেক চেয়ারম্যান (অবঃ), কলোরেকটাল সার্জারি বিভাগ,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

শেয়ারনিউজ/এ/২৬-১২/২২১০


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.