আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিলেতের হাওয়া (৩৮)


টিভি প্রোগ্রাম আজ ১৪ এপ্রিল। আজ ইকরা টিভিতে প্রোগ্রাম। ছোটভাই নিজামকে পেকহাম পৌঁছে দিয়ে আমি চলে গেলাম সালেহ হামিদী ভাই’র অফিসে। রয়েল লন্ডন হসপিটালের ঠিক বিপরীতে হামিদী ভাই’র অফিস। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করছেন ফয়েজ ভাইও।

আমরা তিনজন বের হলাম এক সাথে। ট্রেনে উঠলাম। এই প্রথম পাতাল ট্রেনে ভ্রমণ করা হলো। পাঠককে এখন পর্যন্ত একটি তথ্য জানানো হয়নি। লন্ডন শহরে বাস এবং ট্রেন দু’টোই চলে সমান তালে।

তবে ট্রেনগুলো আমাদের মতো রাস্তা দিয়ে চলে না। হয় চলে মাটির নিচ দিয়ে নয়তো বিল্ডিং এর উপর দিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় তৈরি রাস্তায়। কেতাবী ভাষায় বললে বলতে হবে আন্ডার গ্রাউন্ড অভার গ্রাউন্ড রোড দিয়ে। মোটামুটি ৩০ মিনিটে আমরা গিয়ে পৌঁছলাম ইকরা টিভির স্টুডিওতে। সেখানে একে একে এসে জড়ো হলেন মাওঃ মুফতী আব্দুল মুনতাকিম, মুফতী মওসুফ, ইকরা টিভির মালিক ইমাম কাসিম সহ অনেকে।

পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন তাজুল ভাই। আর উপস্থাপনায় সালেহ আহমদ হামিদী। অনুষ্ঠানটি ছিলো জেএনআই ট্রাস্ট যুক্তরাজ্যের একটি মানবিক প্রোগ্রাম। অসহায় মানুষের সাহায্যে সংস্থাটি কাজ করে থাকে। অনুষ্ঠানের শুরুতে বেশ বিব্রতবোধ করছিলাম আমি।

কারণ অনুষ্ঠানটি ছিল লাইভ। সরাসরি স¤প্রচার হচ্ছিলো। জীবনে এই প্রথম টিভিতে সরাসরি স¤প্রচারিত কোনো প্রোগ্রামে কথা বলছি। অনেক বেশি আনইজি ফিল করছিলাম আমি। আমি সেই প্রোগ্রামের অংশ ছিলাম না।

আমি ছিলাম মেহমান হিসেবে। তাজুল ভাই আমাকে আরো বেশি অস্বস্থিতে ফেলে দিলেন বাংলাদেশ থেকে আগত হেন-তেন লেখক হিসেবে উপস্থাপন করে। সাথে এটাও ঘোষণা করে দিলেন, জে,এন,আই'র মানবিক আহবানে যারা সাড়া দেবে, তাদের প্রত্যেককে এই লেখকের কয়েকটি বই সৌজন্য উপহার হিসেবে দেয়া হবে। আমার ৫টি বই স্কিনে প্রদর্শন করতে লাগলেন। আমি মনে মনে ভাবলাম, কাজটি আমার জন্য মন্দ হচ্ছে না।

বিনে পয়সায় পুরো বিলেতে আমার বই'র লাইভ বিজ্ঞাপন হয়ে যাচ্ছে। অনেক টাকা-পয়সা খরচ করেও এই সুযোগ আমি পেতাম না। মিনিক ত্রিশেক সময় আমাকেও কথা বলতে হলো। পরিচিত/অপরিচিত অনেকেই ফোনে শুভেচ্ছা জানালেন। কোশল বিনিময় হয়ে গেলো এই ফাঁকে।

আমার জন্য সে এক নতুন অভিজ্ঞতা। বলছিলাম আলেমদের কাছে লোকেরা, বিশেষত বিলেতের বাঙালিরা ফোন করে করে যে পর্যায়ের কথাবার্তা বলছিলেন, তার সামান্য অংশ তুলে ধরি। এ থেকেই পাঠকের কিছুটা আন্দাজ পেয়ে যাবার কথা সেদেশের বাঙালি কালচারাল অবস্থা। অনুষ্ঠানে অনেকেই সরাসরি ফোন করে অনেক প্রশ্ন করলেন। অনেক মহিলা; আলেম-উলামাকে দেখে কান্না জড়িত কন্ঠে দোয়া চাইলেন সন্তানের হেদায়তের জন্য।

বিশেষত কন্যা সন্তানদের। অনেকেই তাদের নাম বললেন না। শুধু বললেন, আমার মেয়েদের জন্য একটু দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন তাদের সুপথে ফিরিয়ে আনেন। উপস্থিত আলেমরা প্রশ্নগুলোর জবাব দিলেন।

শান্তনা দিতেও চেষ্টা করলেন। যে একমাস আমি কাটিয়ে এসেছি, যেটুকুন দেখেছি, তাতে আমার মনে যে ধারণাটি পাকাপোক্তভাবে আসন গেড়েছে, তা থেকে আমি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, ব্রিটেনের যে বাঙালি মেয়েগুলো একটু বে-লাইনে চলে গেছে, তাদেরকেই বাবা মা’রা দেশে এনে বাঙালি ছেলের কাছে বিয়ে দিচ্ছেন। আর যেগুলোর অবস্থা বেশি ভয়াবহ, তাদের জন্য খোঁজা হয় আলেম হাফেজ জামাই। বাবা মায়ের আশা, আলেম’র টাচে মেয়ে যদি একটু লাইনে আসে। শতকরা ১০% বাঙালি ফ্যামিলি আছে যারা তাদের সন্তানদের লাইনে রাখতে পেরেছেন।

শালিনতার গন্ডির ভেতরে ধরে রাখতে পেরেছেন শক্ত হাতে। তবে বেশিরভাগ ফ্যামিলির অবস্থাই করুণ! সেদেশের আইন, সেদেশের সামাজিকতা অনুকূল থাকায় ছেলে-মেয়েরা কৈশোরেই অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে পাঁকামোতে। সেক্সুয়াল রিলেশন তখন তাদের কাছে হয়ে পড়ছে একটি রুটিন ওয়ার্কের মতো। মনে করা যাক মেয়ের বয়স ১১/১২। সে স্কুল ছুটির পর চলেগেছে ছেলে বন্ধুর সাথে।

রাত কাটিয়ে এসেছে তার সাথে। এ ক্ষেত্রে মেয়ের বাবা মা অসহায়। তাদের করার কিছুই নেই। এমনকি মেয়েকে একটু জোর গলায় যে ধমকও দেবেন, সেটাও সম্ভব না। মেয়ে যদি পুলিশে কল করে বসে, যদি বলে আমি আমার ছেলে বন্ধুর সঙ্গে রাতে ছিলাম বলে আমার মা আমার বাবা আমাকে বকাঝকা করছেন, তাহলে পুলিশ এসে উল্টো মা বাবাকেই ধরে নিয়ে যাবে।

আগেই জানিয়েছি ওরা সভ্য জাতি? এটাই তাদের সভ্যতা। ভাগ্যিস আমরা সভ্য নই। প্রোগ্রাম শেষ হলো রাত একটায়। বাসায় ফিরে এসে সোজা বিছানায় চলে গেলাম। কিছুক্ষণ বিছানায় এপাশ-ওপাশ করে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেলাম আজ রাতে আর ঘুম আসবে না।

আমিও আর জোরাজুরি করলাম না। বেচারা ঘুম। দিনের পর দিন, প্রতিদিনই তো সময় মতো চলে আসছে। একদিন আসতে চাইছে না। আসুক না যখন ইচ্ছে।

সমস্যা কী। কাগজ-কলম নিয়ে আমিও বসে পড়লাম। রাত যত গভীর হয়, লিখে ততই আরাম পাওয়া যায়। ...ক্রমশ
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।