আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিলেতের হাওয়া (৩৭)


স্মরণীয় দিন ১১ এপ্রিল। আজ আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় দিন। দেশের সীমানার বাইরে এই সুদূর বিলেতে এবং রীতিমতো হল ভাড়া করে আমার একক গ্রন্থ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। আগেই জানতাম আমি। এই ক'দিনে আরো ভাল করে জেনেছি এখানকার মানুষের হাতে অবসর সময় একেবারেই নেই।

আমি ভাবছি তরঙ্গ সাহিত্য পরিষদের কর্মকর্তাদের কথা। অনেক পরিশ্রম করে তারা এই প্রোগ্রামের আয়োজন করেছেন। এখন লোকজন যদি না আসে, তাহলে কী হবে? আমরা বসে থেকে কী করবো? এদেশে তো একটি মশাও এ পর্যন্ত চোখে পড়েনি যে, বসে বসে মশা মারবো। দুপুর তিনটায় শুরু হলো প্রদর্শনী। তিনটার আগেই এসে হাজির হলো কিছু বন্ধু-বান্ধব।

আব্দুল কাহের, মাহমুদ, ইউসুফ, ওয়েছ। তারা বই’'র পসরা সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আমার সকল অপ-ধারণাকে মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়ে বিকেল ৪টার আগেই হলটি প্রায় পুরোটা ভরে উঠলো। আমন্ত্রিত অতিথিরা কেউই মিস করেন নি। আমি বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করলাম, যারা এখানে এসেছেন, তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই যে কোনো অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হবার মতো ব্যক্তিত্ব রয়েছে।

অথচ এই সাহিত্য আড্ডায় এসে তাদের অনেকেই চুপ মেরে বসে আছেন পেছনের সারিতে। আমার চোখে পানি এসে গেলো শ্রদ্ধায়, কৃতজ্ঞতায়, লজ্জায়। আমার মতো চুনোপুটি লেখকের গ্রন্থমেলায় তারা ছুটে এসেছেন, সকল ব্যস্ততাকে পেছনে রেখে। নিঃসন্দেহে এটা তাদের মহত্ব ও বড়মনের পরিচয়। যারা সেদিন উপস্থিত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে আমার পরিচিত অন্যতম কয়েকজন হলেন, মানবাধিকার সংস্থা ভয়েস ফর জাস্টিস এর সেক্রেটারী জেনারেল, বাংলাপোষ্ট পত্রিকার প্রধান সম্পাদক, বিশিষ্ট লেখক, জনাব কে এম আবু তাহের চৌধুরী, ইংরেজি ঢাকাপোষ্ট এর সম্পাদক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক অধ্যাপক অমর ফারুক, মারকাজুল উলুম ইসলামিক স্কুল মাইল্যান্ড এর প্রিন্সিপাল মাওঃ ইমদাদ মাদানী, ইব্রাহিম কলেজের শরীয়াহ কনসালটেন্ট জনপ্রিয় টিভি ভাষ্যকার মুফতি আব্দুল মুনতাকিম, মদীনাতুল খায়রীর চেয়ারম্যান মাওঃ ফয়েজ আহমদ, খিদমাহ একাডেমীর পরিচালক আলহাজ্ব আতাউর রহমান, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মুফতী মওসুফ আহমদ, মাদানিয়া ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্টের চেয়ারম্যন মাওঃ হুসাইন আহমদ, বিশিষ্ট ইমিগ্রেশন এডভাইজার জনপ্রিয় টিভি প্রেজেন্টার সালেহ আহমদ হামিদী, কবি ফররুখ ফাউন্ডেশনের সভাপতি রফিক আহমদ রফিক, রেনেসাঁর সাধারণ সম্পাদক কবি শিহাবুজ্জামান কামাল, জনমত পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক কবি ফায়সাল আইয়ূব, পল্লিকবি খ্যাত কবি রহমত আলী, কবি খোয়াজ আলী প্রমুখ।

যারা উপস্থিত হয়ে ছিলেন, তাদের মধ্যে আমার ব্যক্তিগত পরিচিত কয়েকজন হলেন, মাওঃ নাজিম উদ্দিন, শফিকুল ইসলাম, আব্দুল কাহির, আব্দুর রহমান ইউসুফ, মাহমুদুর রহমান, আশরাফ খান, আশিকুর রহমান ফয়সল, খায়রুজ্জামান নোমান, হাঃ মাহমুদ, মনিরুল ইসলাম ওয়েস প্রমুখ। বক্তারা যে যা বললেন, তার প্রায় সবটুকুই আমি কেন্দ্রিক। আমার বুঝতে অসুবিধা হয়নি কথাগুলো তারা বলছেন একজন বাংলাদেশি লেখকের প্রতি মমতার কারণে। আমি যা নই, তারচে' অনেক বাড়িয়ে বলা কথামালাকে সাভাবিক কারণেই এড়িয়ে যাওয়া হলো। পুরো অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে রাখলেন তাজুল ভাই।

তাজুল ভাই একজন ভাল লেখক, জানতাম। তার কাব্যগ্রন্থ বিনাশী সভ্যতা'র কবিতাগুলো বরফশীতল ঠান্ডার মওসুমেও শরীরে উষ্ণতা যোগায়। শালীনতার ভেতরে থেকেও যে অসামান্য কিছু লেখা যায়, সেটা তাজুল ভাই’র কবিতা না পড়লে বুঝা যায় না। তাজুল ভাই একজন ভাল কলামিষ্টও। তার অনেকগুলো গুণের সাথে আমার পরিচয় ছিলো।

তবে তিনি যে একজন উঁচুমানের উপস্থাপকও, এটা এই প্রথম জানলাম। অনুষ্ঠান শেষ হলো সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিটে। ইষ্ট লন্ডন মসজিদে মাগরিবের নামাজ আদায় করা হলো। নামাজের পর বারাকাত রেস্টুরেন্টে আপ্যায়ন অনুষ্ঠান। মাহমুদ ভাই’'র সৌজন্যে।

সেখানে আবার রীতিমত আড্ডা জমে উঠলো। সাড়ে ৯ টায় বাসায় চলে গেলাম। ঠান্ডাটা একটু বেশিই ছিলো আজ। তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রী। আবার বেরিয়েছিলাম মোজা ছাড়া।

প্রচন্ড মাথাধরা নিয়েই ফিরলাম। রাতে আর ভাত খেতে ইচ্ছে করলো না। শাহ কয়েস ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, প্যারাসিটামল-টিটামল আছে কি না! তিনি বললেন, প্যারাসিটামল নেই। তবে যেটি আছে, সেটি প্যারাসিটামলের বাপ। খেয়ে ১০ মিনিট চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলে মাথা ব্যথাকে আর লেম জ্বালিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

আমি প্যারাসিমটামলের মুহতারাম আব্বাকে পেটে ঢুকিয়ে ঝিম মেরে পড়ে রইলাম। ১০ মিনিটের মধ্যেই মাথা ধরা কমেছিলো কি না-জানি না। সকালে ঘুম থেকে উঠে অবশ্য বুঝার কথাও নয়। ...ক্রমশ
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।