এই ফাঁকে জানিয়ে দিই, ব্রিটেনের বাঙালি ছেলে-মেয়েদের সাথে কথা বলতে হয় মেপেমেপে। ওরা বাংলা থেকে ইংরেজিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। তাজুল ভাই’র ছোট্ট দুই মেয়ে, সায়মা ও নাশিতার গল্প আগে একবার করেছি। ওরা আমার সাথে বাংলায় কথা বলতো খুব কষ্ট করে। আর আমিও তাদের সাথে ইংলিশ ফলানোর চেষ্টা করতাম না।
ওরা ষ্টেইট ফরোয়ার্ড কালচারের মেয়ে। গ্রামার টামারে এদিক উদিক হলে, একটু ভুল হলেই ওরা আর ছাড় দেবে না। সাথে সাথে লজ্জা দিয়ে দেবে। এই বুড়ো বয়সে বাচ্চাদের কাছে লজ্জা পাবার কোনো ইচ্ছাই আমার হয়নি। এটি একটি কারণ।
দ্বিতীয় কারণ হলো, ওদের ইংরেজিটাও অন্য রকম। ‘থ্রী’কে ফ্রি বললে কিভাবে বুঝবো এটা তিন? ফ্রি মানে তো মাগনা ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পাবে না আমার মতো কেউ। একদিনের ঘটনা বলি।
এক সন্ধ্যায় সায়মা কাগজ কলম নিয়ে চলে এলো আমার কাছে। নতুন একটি খেলা সে শিখেছে।
আমার সাথে খেলতে চায়। প্রথমে সে আমাকে খেলাটির রুলস-রেজুলেশন বুঝিয়ে দিলো। আমি কিছু না বুঝেই মাথা ঝাঁকালাম, যেন বুঝে ফেলেছি। তারপর শুরু হলো খেলা। আমার কাজ হচ্ছে আমি এক থেকে দশের মধ্যে একটি একটি সংখ্যা বলবো।
ব্যাস।
আমি একটি সংখ্যা বলি, সে কাগজে একটি টান দেয়। আরেকটি বলি। সে আরেকটি টান দেয়। এভাবে কী যেন একটা তৈরি হয়।
হঠাৎ সে চিৎকার করে বলে উঠে সে উইন করেছে!
আমি হাততালি দিই। বেচারি এত কষ্ট করে জিতেছে, হাততালি দেয়া দরকার? অবশ্য কীভাবে জিতেছে কিংবা আদৌ জিতেছে কি না, আমার জানা নেই, এটা কোনো সমস্যা না।
তো খেলার নিয়ম অনুযায়ী এক সংখ্যা একাধিকবার বলা যাবে না। আমি ৭ সংখ্যাটি ভুলক্রমে ২ বার বলে ফেললাম। দ্বিতীয়বারের সময় সায়মা বললো-
রেডিসেইট।
আমি আবার বললাম, সেভেন।
সে বললো, নো, রেডিসেইট।
আমি পড়লাম মহা মুশকিলে। ‘রেডিসেইট’ মানে কি? এটা এই খেলারই কোনো অংশ কিনা, তাও তো বুঝতে পারছি না। শেষে লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে বললাম, সরি সায়মা, আমি বুঝতে পারছিনা তুমি কী বলছো?
তখন সে বললো, এই নাম্বার একবার তুমি বলেছো মামা।
আমি বললাম, ও আচ্ছা। তখন অনেক গবেষণা করে আবিষ্কার করলাম সে বলেছিলো-রেডিসেইট। এর মানে সে বলেছে ‘অলরেডি সে ইট’। অর্থাৎ তুমি ইতোমধ্যেই এটা বলে ফেলেছো। এখন ‘ইয়েস’ কে ‘ইয়া’ বললে না হয় বুঝলাম, কিন্তু এতখানি অংশ সংক্ষেপ করে ফেললে এবং সেটা না বুঝলে আমার কী দোষ?
সায়মার সাথে খেলা শেষ করেছি।
তখন নাশিতা এসে বললো-
মামা, বলোতো আল্লাহ কোথায় থাকেন?
আমি বিস্মিত হবার ভান করে বললাম, কোথায়?
সে বললো, কোথাও থাকেন না।
আমি অবাক হলাম। সত্যিই বুঝতে পারলাম না তার কথা। বললাম, মানে?
সে বললো, বিকাউজ, আল্লাহ তো সবখানে থাকেন, তাই কোনো এক জায়গায় থাকেন না।
অতি উচ্চমার্গের দার্শনিক উক্তি।
ইমাম গাজ্জালী কিংবা আইনস্টাইনের যুগে এই মেয়ের জন্ম হওয়া উচিত ছিলো।
তারপর সে তার শিশুসূলভ অবস্থানে ফিরে এলো। বললো, বলতো মামা, আল্লাহ কী তৈরি করেছেন?
আমি বললাম, তুমিই বলো।
সে বললো, মানুষ আর কার্টুন।
আমি বললাম, কেন?
সে বললো আল্লাহ মানুষকে নিয়ে খেলবেন, আর মানুষ কার্টুন নিয়ে খেলবে।
আমি বললাম, তাই নাকি।
সে বললো, ইয়েস।
...চলবে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।