ছোটবেলা থেকেই প্রচন্ড অন্তর্মূখী ছিলাম। বাইরের জগতের সাথে যোগাযোগ ছিল কম। আমার হাইস্কুল ছিল কম্বাইন্ড, কিন্তু মেয়েদের সাথে কথা বলতে ভীষণ লজ্জা পেতাম। শুধু গোল ওরিয়েন্টেড চিন্তা-ভাবনা ছিল সেই হাইস্কুল জীবন থেকেই। ক্লাসে বরাবরই প্রথম ছিলাম।
মেয়েরাও আমাকে পছন্দ করত কিন্তু কখনো কিছু বলতে পারতনা। এভাবেই স্কুল জীবন কেটে যায়। এসএসসির রেজাল্ট খুব একটা ভাল হলনা। কলেজ জীবন শুরু হল। কলেজ জীবনে অনেক ভাল ছাত্রের ভিতরে হারিয়ে গেলাম।
ভাল রেজল্টও করতে পারছিলাম বা অন্য কোনোভাবে নিজেকে হাইলাইটও করতে পারছিলাম না। ফলে নিজের মধ্যে সবসময় একটা হতাশা কাজ করত। প্রেমের চিন্তা তো কখনো মাথায়ই আসেনি। ইন্টার জীবন কেটে যায়। রেজাল্ট অপ্রত্যাশিতভাবে ভাল হয়ে যায়।
মেডিকেল কোচিং পারফরমেন্স খুবই ভাল হয়। যার ফলে ভাল একটা মেডিকেলেও চান্স পেয়ে যায়। মেডিকেলে গিয়ে একটু বহির্মূখী হবার চেষ্টা করি। গ্রুপের মেয়েদের সাথে কথা বার্তা বলি। মেয়েদের সাথে বন্ধুত্বও হয়।
মনের মধ্যে একটা প্রেম প্রেম ভাব জেগে উঠে। কিন্তু মনের মত কাউকে পাইনা। অন্তর্মূখীতা আমার জেনেটিক ইনহেরিটেন্স, এটাকে কি আর পুরোপুরি দূর করা যায়!এর ফলে শুধু ১৫৪ জনের ব্যাচের মধ্যে আমার ৪০ জনের গ্রুপের মেয়েদেরই চিনতাম। বাইরের কাউকে খুব একটা চিনতাম না। দ্বিতীয় বর্ষে উঠার শুরুতে বড় খালা ফোন করে তার ছেলের জন্য আমার ব্যাচের আয়েশা নামের একটা মেয়েকে দেখতে বললেন।
আমি বন্ধুদের আয়েশাকে দেখিয়ে দেয়ার জন্য বললাম। বন্ধুরা কয়েকদিন দেখিয়ে দিলেও আমি চিনতে পারলাম না। অবশেষে একদিন চিনতে পারলাম। খালাত ভাই অন্য যায়গায় বিয়ে করে ফেলল। আমি আয়েশার সাথে কথা বলা শুরু করলাম।
যেহেতু আমি মেয়েদের সাথে কথা বলতে পারতাম না তাই বন্ধুত্ব প্রথম দিকে খুব এক জমল না। সময়ের পরিক্রমার সাথে সাথে বন্ধুত্ব কিছুটা জমে উঠল। আমার মনে ওর প্রতি ভালবাসা জেগে উঠল। আমি প্রেমে আনাডি হওয়ায় রুমমেটের পরামর্শ নিলাম। রুমমেট বন্ধুত্ব চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিল।
তারপর ঘটনা পরিক্রমায় বন্ধুত্বে ভাটা পড়ল,অপরদিকে আমার প্রেমের নৌকা পাহাড় বেয়ে চলতে লাগল। একমুখি প্রেম। বন্ধুত্ব সামনাসামনি দেখা হলে দুইটা কথা আর একটা হাসির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ল। আমার মনে হতে শুরু করল ও আমার অনুভূতি বুঝতে পারে। রুমমেটকে সব খুলে বললাম।
রুমমেট অফার দিয়ে দিতে বলল। বলল এখন রাজি না হলেও পরে রাজি হয়ে যাবে। এর কারণ হিসেবে বলল মেডিকেলের মেয়েরা আল্টিমেটলি মেডিকেলের ছেলের সাথেই প্রেম করে। আমি অফার দিলে তো অন্য কেউ অফার দিবেনা তাই আমার সাথে প্রেম করাই অত্যাবশ্যক। আমি শতভাগ আশাবাদি হয়ে উঠলাম।
অপেক্ষা করতে লাগলাম মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য। কিন্তু সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আর আসেনা। প্রতিটা নির্ঘুম রাত আর ঘুমন্ত প্রভাতগুলোকে ওর জন্য উৎসর্গ করতে থাকি। আর প্রতিনিয়ত খালিদের ‘কোনো উপন্যাস আমি লিখিনি’ এই গানটি শুনতে থাকি। ও আমার সাথে প্রেম করবেনা এই পুর্বশর্তে আমার সাথে আলোচনা করতে চাইলো কিন্তু আমি রাজি হলাম না।
প্রেম না করলে আবার কথা কিসের?যাই হোক এভাবেই আমার দিন কেটে যেতে লাগলো। একদিন মিগে ওর রুমমেটের আইডি দিয়ে আমার সাথে অনেকক্ষণ চ্যাট করল। সে আমাকে কয়েকটি শর্ত দিল। আমি ওকে অনেক বুঝালাম কিন্তু ও মানতে চাইল না। আমি আশা ছাড়লাম না।
বার্তা বাহকের মাধ্যমে বার্তা পাঠাতেই থাকলাম। কিছুই হলনা। ২০০৯ এর মে মাসের মাঝামাঝি আমি ওকে প্রথম বারের মত মোবাইলে কল দিলাম। তিন দিনের মধ্যেই ওকে আমার ভালবাসায় মোটিভেট করতে পারলাম। কয়েক দিন রাত এগারোটার পর থেকে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা হত।
শেষ যে রাতে কথা হয় সেদিন ও আমার ভালবাসা গ্রহণ করে। নিজেকে পৃথিবীর অন্যতম সুখি আর সফল মানুষ মনে হল একটা রাতের জন্য। পরের দিন বিকেলে আমাদের একসাথে বসার কথা দুজনে মিলে ঠিক করি। সবকিছু ঠিকঠাক। বিকেলে শহর থেকে ওর জন্য ফুল আর কিছু গিফট কিনে আনি।
আসার পথে ও আমাকে ফোন করে। ওর ফোন দেখে আমি আতংকিত হয়ে যায় মনের অজান্তেই। দুইবার ফোন করার পর ফোন ধরি। অপর প্রান্ত থেকে ও শুধু বলেই গেল। ওর সাথে আমার মানাবেনা,আগডুম বাগডুম নানান কথা।
আমি স্বর্গ থেকে একদম গিরিখাদে পরে গেলাম। চেনা পৃথিবী আমার কাছে অচেনা মনে হল। অতীতের মত আবারো জীবন সাজানোর স্বপ্নের খুব কাছাকাছি এসে ধসে পড়লাম। রাতে ওকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলাম। কিছু হলনা।
আসলে ও এরই মধ্যে একটা ছেলের সাথে প্রেম করত। ছেলেটা নাকি সিঙ্গাপুরে পাইপ ইঞ্জিনিয়ারিং পরে। আমি ওকে বুঝালাম ছেলেটা প্রতারক কারণ আমাদের ইয়ারমেট সবাই ততদিনে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে ফেলছে। ও কিছুতেই বুঝতে চাইল না। আসলে ব্যর্থতা আমারই ছিল।
আমি ওকে বুঝাতে পারিনি। ছেলেটাকে বিয়ে করল। সংসার করতে থাকল। একসময় জানতে পারল ছেলেটা আসলেই প্রতারক। ইঞ্জিনিয়ার তো নয়ই ইন্টারও পাশ করেনি।
সে সিঙ্গাপুরে কাজ করে। হায়রে নিয়তি আমি ডাক্তার হয়ে যে মেয়ের জন্য দূরন্ত ষাড়ের চোখে লাল কাপড় বাধার জন্য প্রস্তুত ছিলাম সেই মেয়ে একটা কামলার কাছে প্রতারিত হল। । বঞ্চিত হলাম অথর্ব আমি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।