আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাওয়া ভবনের প্রভাবশালীরা কে কোথায়?

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব। বিগত জোট সরকারের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিতি পায় হাওয়া ভবন। বলা হয়ে থাকে, তারেক রহমানের নেতৃত্বে ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের জয়ী হওয়ার পেছনে বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছিল এই ভবন। সে সময় ভবনটির মূল আকর্ষণ ছিল বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান। নির্বাচনের সময় তার সহযোগী ছিলেন মাহী বি চৌধুরী ও গিয়াসউদ্দিন আল মামুন।

নির্বাচনে জিতে সরকার গঠনের পর ক্রমেই মাহী বি চৌধুরীর সঙ্গে তারেকের দূরত্ব বেড়ে যায়। রাষ্ট্রপতি হিসেবে বি চৌধুরী পদত্যাগের পর মাহীর সঙ্গে তারেকের সব সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। ওই সময় থেকে লাইম লাইটে চলে আসেন হারিছ চৌধুরী, রশিদুজ্জামান মিল্লাত এমপি, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, হাবিব-উন-নবী সোহেল, সাহাবুদ্দিন লাল্টু, রকিবুল ইসলাম, সিলভার সেলিম, লুৎফর রহমান বাদল, মোটা তারেক ওরফে মালয়েশিয়া তারেক, আনোয়ার, ওসি হামিদ, রানী, আশিক ইসলাম, জহিরউদ্দিন স্বপন, মিয়া নূর উদ্দিন অপু, কাজী কামাল এমপি, শাহরিন ইসলাম তুহিন, সাইফুল ইসলাম ডিউক, ইলিয়াছ আলী এমপি, আজিজুল বারী হেলাল, শফিউল বারী বাবু, নূর আফরোজ জ্যোতি, গাবতলীর পৌর চেয়ারম্যান মোরশেদ মিল্টন, ডা. ফিরোজ মাহমুদ ইকবাল, শফিউর রহমান বাবু, হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, সায়মন আকবর, সাজ্জাদুল ইসলাম জয়, এনামুল হক, সাজ্জাদ হোসেন নাইট, লুৎফুজ্জামান বাবর, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সফিকুল হাসান তৃপ্তি, এমরান সালেহ প্রিন্স, আবদুস সালাম পিন্টু, ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন, হেলেন জেরিন খান, আসাদুল হাবিব দুলু, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, হালিমা নেওয়াজ সাররী, রাজিব সিরাজ অপু, অনিন্দ ইসলাম অমিত, ফয়সাল মোরশেদ খান, তানভীর ইসলাম, জহিরুল ইসলাম চৌধুরী, তাহমিন আক্তার ডেল, খন্দকার আবু আশরাফ, জোবায়েদ হোসেন রানা, ইমতিয়াজ আহমেদ এবং হুমায়ুন আহমেদ চৌধুরী। বিএনপি’র তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানকে ঘিরে তারা গড়ে তোলে এক সিন্ডিকেট। অভিযোগ রয়েছে, এ সিন্ডিকেট তখন নিয়োগ-বদলি-টেন্ডার অর্থনৈতিক লেনদেনসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতো।

হাওয়া ভবনের এ সিন্ডিকেটের প্রায় সবাই ১/১১ পর পালিয়ে যান। এখন দেশে ফিরে আসার চিন্তা-ভাবনা করছেন অনেকেই। এ সিন্ডিকেটের মূল হোতা হারিছ চৌধুরী বর্তমানে লন্ডনে। তিনি সেখানে ব্যবসা করছেন। সিলভার সেলিম এখনও পলাতক।

লুৎফুজ্জামান বাবর এখন জেলে। লন্ডনে অনেকটাই নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন তারেক রহমান। আর সুবিধাভোগীরা কেউ দেশে, কেউ বিদেশে পালিয়ে রয়েছেন। এদের অনেকেই ছিলেন অযোগ্য, স্বল্পশিক্ষিত। কারো কারো পরিচিতি ছিল অস্ত্রধারী ক্যাডার হিসেবে।

এদের সবাই সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তারেক রহমানকে ব্যবহার করে কতটা অর্থ উপার্জন করা যায়, তারা সেই প্রতিযোগিতায় মেতে ছিলেন। বিএনপি-জামায়াতের পাঁচ বছর এরাই ছিলেন তারেক রহমানের প্রিয়ভাজন, পরামর্শক ও অলিখিত উপদেষ্টা। হাওয়া ভবনের ব্যক্তিগত স্টাফ ছিলেন ওসি হামিদ ও আনোয়ার। এরা দু’জনই হাওয়া ভবনের নাম ভাঙিয়ে তদবির করে এখন বিপুল অর্থবিত্তের মালিক।

তারেক রহমানের নাম ভাঙিয়ে ৫ বছর তারা সর্বত্র দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। ওসি হামিদ ছিলেন পুলিশ বিভাগে মূর্তিমান আতঙ্ক। এক সময় গাইবান্ধার ওসি ছিলেন তিনি। পরে দুর্নীতির দায়ে চাকরিচ্যুত হন। পুলিশ বিভাগে নিয়োগ-বদলি-পদোন্নতিতে তার হাত ছিল অনেক লম্বা।

অভিযোগ রয়েছে, এই বিভাগে তদবির করে ৫ বছরে শত কোটি টাকার মালিক বনে যান তিনি। তারেক রহমানের ব্যক্তিগত পিয়ন ছিল আনোয়ার। সারাদিন ব্যস্ত থাকত তদবির নিয়ে। এই আনোয়ারও এখন কোটিপতি। ওয়ান-ইলেভেনের পরে পালিয়ে মালয়েশিয়া চলে যান।

সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ ছিলেন রশিদুজ্জামান মিল্লাত, জহির উদ্দিন স্বপন, নাদিম মোস্তফা, নাসের রহমান, কাজী কামাল, নূর আফরোজ জ্যোতি, ইলিয়াছ আলী, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, হেলেন জেরিন খান প্রমুখ। অভিযোগ রয়েছে, হাওয়া ভবনের নাম ভাঙিয়ে এরা সবাই প্রচুর অর্থের মালিক বনে যান। ওয়ান-ইলেভেনে জহির উদ্দিন স্বপন ভোলপাল্টে সংস্কারবাদীদের দলে যোগ দেন। বাকিদের কেউ দুর্নীতির দায়ে জেলে যান। কেউ পালিয়ে বিদেশে চলে যান।

মন্ত্রীদের মধ্যে হাওয়া ভবনের অন্যতম পরামর্শক ছিলেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, জিয়াউল হক জিয়া, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সালাউদ্দিন আহমেদ, আমান উল্লাহ আমান, এহছানুল হক মিলন, উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আসাদুল হাবিব দুলু ও আবদুস সালাম পিন্টু। এসব মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী হাওয়া ভবনের নির্দেশে সব কাজ সম্পাদন করতেন। কয়েকজন মন্ত্রী প্রকাশ্যেই বলতেন, ‘আমাকে টাকা নিয়ে হাওয়া ভবনে দিয়ে আসতে হয়’। ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী দুর্নীতির মামলায় সবাই জেলে যান। লুৎফুজ্জামান বাবর ও আবদুস সালাম পিন্টু এখনো জেলে রয়েছেন।

জিয়াউল হক জিয়া নিষ্ক্রিয়। বাকি সবাই আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তরুণ নেতা সফিকুল হাসান তৃপ্তি ও এমরান সালেহ প্রিন্স ছিলেন হাওয়া ভবনের অন্যতম নীতি-নির্ধারক। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনে উভয়েই ভোল পাল্টে সংস্কারবাদী হয়ে যান। অথচ এরা তারেককে ব্যবহার করে প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদের দেখলে এক সময় কেবিনেট মন্ত্রীরা পর্যন্ত সালাম দিতে বাধ্য হতেন। সচিবালয়ে তারা ঢুকলে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর স্টাফরা ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। উভয় নেতাই এখন অনেকটা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেছেন। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটান তারা। পেশাজীবীদের মধ্যে হাওয়া ভবনের সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ ছিলেন কৃষিবিদ জাভেদ ইকবাল ও ড্যাব-বিএমএ নেতা ডা. জাহিদ হোসেন।

দুই নেতাই দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত। এ দুই পেশাজীবী সব কাজে তারেক রহমান তথা হাওয়া ভবনকে ব্যবহার করতেন। ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও কৃষিবিদ জাভেদ ইকবালকে কোথাও দেখা যায় না। তিনি দেশেই গা ঢাকা দিয়ে চলেন। অথচ এরাই একদিন স্বাস্থ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রক ছিলেন।

তাদের ছিল দোর্দ- প্রতাপ। তারা উভয়েই হাওয়া ভবনের নাম ভাঙিয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। তারেক রহমানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন একটি ব্যবসায়িক গোষ্ঠীও। এদের মূল নায়ক ছিলেন গিয়াস উদ্দিন আল মামুন। মামুন ছাড়া আরো ছিলেন বাবুল কাজী, অ্যাডভোকেট আনিছুর রহমান, রাজিব সিরাজ অপু, এনামুল হক মামুন, আবদুল্লাহ আল মামুন, আবেদ হাসান মাহমুদ প্রমুখ।

গিয়াস উদ্দিন আল মামুন বর্তমানে জেলে রয়েছেন। বাবুল গাজী, রাজিব সিরাজ অপু ও এনামুল হক মামুন বিদেশে, বাকিরা সবাই দেশে ব্যবসা করছেন। হাওয়া ভবনে তারেক রহমানের হয়ে অর্থের লেনদেন করতেন তৌহিদুল ইসলাম ওরফে আশিক ইসলাম ওরফে পাপ্পু, রকিবুল ইসলাম ও পিএস মিয়া নূর উদ্দিন অপ্। ু শুধু হাওয়া ভবনকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তারা। অভিযোগ রয়েছে তারেক রহমানের হয়ে বিদেশে অর্থ পাচারে এই থ্রি স্টার বিশেষ ভূমিকা রাখেন।

ওয়ান-ইলেভেনের পর তারা পালিয়ে ভারতে চলে যান। পরে আমেরিকা ও কানাডায়। বর্তমানে আশিক আমেরিকায় ব্যবসা করছেন। রকিবুল ইসলাম বকুল দীর্ঘদিন মালয়েশিয়া থেকে সম্প্রতি দেশে ফিরে এসেছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। মিয়া নূর উদ্দিন অপু এখনো পলাতক।

পারিবারিক আত্মীয়দের মধ্যে তিন খালাতো ভাই সাইফুল ইসলাম ডিউক, তাহসিন আক্তার ডেল ও শাহরিন ইসলাম তুহিন হাওয়া ভবনের নামে ক্ষমতার দাপট দেখান। এদের মধ্যে ডিউক ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় জড়িয়ে কারাগারে রয়েছেন। ডেল ও তুহিন বিদেশে পালিয়ে ছিলেন। সম্প্রতি তারা দেশে ফিরে এলেও পলাতক দিনযাপন করছেন। গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন ছাত্রদল নেতা সাহাবুদ্দিন লাল্টু।

মূলত এই আশীর্বাদ তাকে ছাত্রদল সভাপতি পদ পেতে সহায়তা করে। মামুনের বিভিন্ন ব্যবসায়িক বিষয় দেখাশোনা করেছেন তিনি। হাওয়া ভবনের হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় দেখাশোনা করতেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী ও অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার ডা. ফিরোজ মাহমুদ ইকবাল। অভিযোগ রয়েছে, দু’জনেই শত কোটি টাকার মালিক বনে যান। ডা. ফিরোজ মাহমুদ ইকবাল ও ডা. জোবায়দা রহমান উভয়েই ঢাকা মেডিক্যালের ছাত্র।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে হাওয়া ভবনের অঘোষিত মুখপাত্র বনে যান তিনি। বগুড়ায় পাউবো, সওজ, এলজিইডির সব টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে ৫ বছরে বিপুল অর্থ আয় করেন তিনি। নিজ গ্রাম শিবগঞ্জ উপজেলার আলিয়ারহাটকে ‘মিনি টাউন’ হিসেবে গড়ে তোলেন। তিনি তারেক রহমানকে দিয়ে একদিনে ১৮টি প্রকল্প উদ্বোধন করান। পিতার চেহলামে ৩ লাখ লোক খাইয়ে ঐতিহাসিক রেকর্ড গড়েন।

হাওয়া ভবনের এ ক্ষমতাধর ব্যক্তি ওয়ান-ইলেভেনে পালিয়ে যান। বর্তমানে কানাডায় রয়েছেন। হারিছ চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হিসেবে দায়িত্ব পেলেও তার মূল দায়িত্ব ছিল হাওয়া ভবনের সঙ্গে। প্রায় শত কোটি টাকার মালিক হারিছ চৌধুরী ওয়ান-ইলেভেনে সিলেট সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে মামাবাড়ি আসামের করিমগঞ্জে চলে যান। পরে সেখান থেকে ইংল্যান্ডে।

বর্তমানে সেখানেই চুটিয়ে ব্যবসা করছেন। তারেক রহমানের ব্যক্তিগত খরচের দেখভালও করেন তিনি। হাওয়া ভবনের অত্যন্ত ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছিলেন সাবেক ছাত্রদল নেতা রকিবুল ইসলাম বকুল। দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়োগ-বদলিসহ বিএনপির সাংগঠনিক কর্মসূচি দেখভাল করার দায়িত্ব ছিল তার ওপর। একই সঙ্গে সাবেক ছাত্রদল নেতাদের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিও দেখতেন তিনি।

তিনি ছাত্রদলও দেখাশোনা করতেন। তারেক রহমানের পক্ষে বকুল জোট সরকারের মন্ত্রিসভার ভেতর শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। প্রশাসনে এরা তারেক রহমান গ্র“প নামে পরিচিত ছিল। মন্ত্রীরা কথা না শুনলে তাকে অকার্যকর করে রাখা হতো। জোট সরকারের ৫ বছরে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন তিনি।

বর্তমানে তিনিও পলাতক রয়েছেন। আমিন আহমেদ হাওয়া ভবনের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ছিলেন। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী সময়ে তিনি তারেকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা করেন। তিনি ১ কোটি টাকা চাঁদা দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। অথচ এই ব্যবসায়ীই জোটের ৫ বছর হাওয়া ভবনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

বর্তমানে তিনি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। খাম্বা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাবুল গাজী, ওয়ান-কম্পোজিট লিমিটেডের পরিচালক এনামুল হক মামুনি, গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের পিএস কামরুজ্জামান, হাবুল ও মোটা তারেক সবাই হাওয়া ভবনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। হাওয়া ভবন ভাঙিয়ে তারা একেকজন কোটিপতি বনে গেছেন। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের পর তারা হাওয়া হয়ে যান। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এলে তারা গা ঢাকা দেন।

সম্প্রতি ফিরে এসে পুনরায় ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেছেন বলে জানা যায়। বগুড়া জেলার নেতাকর্মী সমন্বয়ে হাওয়া ভবনে একটি সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। এর মধ্যে ছিলেন তারেক রহমানের পিএস সাজ্জাদ হোসেন নাইট, তার ভাই সুইট, গাবতলী পৌর চেয়ারম্যান মোর্শেদ মিল্টন, ছাত্রদল নেতা এমআর ইসলাম স্বাধীন, মাহফুজ সিদ্দিকী লিটন ওরফে চাকু লিটন, জেলা বিএনপি সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, সাধারণ সম্পাদক ভিপি সাইফুল, মহিলা সাংসদ নূর আফরোজ জ্যোতি, গাবতলী থানা বিএনপি নেতা আতিকুর রহমান আতিক, সন্ত্রাসী নতুন, ধুনট থানা বিএনপি সভাপতি পল্লী মামুন, বগুড়া মিনিবাস সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক, সাবেক সাংসদ জিএস সিরাজের চাচাতো ভাই গোলাম মাহবুব প্যারিস, সাবেক সাংসদ হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুর শ্যালক শামীম চৌধুরী, মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা কবির আহমেদ মিঠু, দাদন ব্যবসায়ী জাকির হোসেন, শহীদুল ইসলাম বাবলু, অ্যাডভোকেট মাহবুব আল শাহীন, বাস মালিক হামিদুল হক চৌধুরী হিরু। মাহবুবুর রহমান বকুলÑ তারেক রহমান ও হাওয়া ভবন কানেকশন দিয়ে কোটিপতি বনে যান। ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তারা পালিয়ে ছিলেন।

এখন আবার দেশে ফিরে এসেছেন। আলোচিত-সমালোচিত এই ভবনের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ছিলেন ভবনের কথিত মালিক আলী আসগার লবী ও এমএএইচ সেলিম। জোটের পাঁচ বছরে উভয়েই দোর্দ- প্রভাবশালী ছিলেন। শত শত কোটি টাকার ব্যবসা বাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। উভয়ে বর্তমানে দেশে অবস্থান করে ব্যবসা করছেন।

মন্ত্রী-এমপির পুত্রদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে হাওয়া ভবনকেন্দ্রিক। এদের মধ্যে ছিলেন পাটমন্ত্রী শাজাহান সিরাজের পুত্র রাজিব সিরাজ অপু, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর পুত্র আবিদ হাসান, বন ও পরিবেশমন্ত্রী তরিকুল ইসলামের পুত্র অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সাংসদ মোর্শেদ খানের পুত্র ফয়সাল মোর্শেদ খান ও মেজর (অব.) কামরুল ইসলামের পুত্র তানভীর ইসলাম। তারা সবাই জোট সরকারের পাঁচ বছর হাওয়া ভবনের ব্যানারে চুটিয়ে ব্যবসা করেন। একইভাবে যুবদল সভাপতি বরকত উল্লা বুলু ও সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুবদল নেতা সাইফুল ইসলাম নীরব, মইনউদ্দিন তিতাস, খন্দকার আবু আশফাক ও হেলেন জেরিন খানের বিশেষ পরিচিতি ছিল হাওয়া ভবনের লোক হিসেবে। এসব নেতা এখন দেশে থেকেই রাজনীতি করছেন।

১/১১ এর ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর প্রতিটি জাতীয় দৈনিকে ফলাও করে হাওয়া ভবনের কর্ণধারদের লুটপাটের কাহিনী প্রকাশ হয়। হাওয়া ভবন তখন হয়ে ওঠে নির্বাচনের ইস্যু। হাওয়া ভবনের কর্মকর্তা ও প্রভাবশালীরা দুর্নীতি দমন কমিশনÑ দুদক-এর মামলার বেড়াজালে আটকে পড়েন। সময়ের আবর্তে আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠছেন হাওয়া ভবনের সাথে জড়িত সিন্ডিকেটের সদস্যরা। কেউ কেউ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সক্রিয় হয়ে ওঠেছেন।

হাওয়া ভবনের সেই নেতারা আবার সক্রিয় হচ্ছেন! আবার সক্রিয় হচ্ছেন হাওয়া ভবনের দোর্দ- প্রতাপশালী ও ক্ষমতাধর বিতর্কিত কর্মকর্তারা। সূত্র মতে, ওয়ান-ইলেভেনের পর গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে বিদেশে পালিয়ে গেলেও এখন তাদের মধ্যে অনেকে দেশে ফিরে এসেছেন। আর বাকিরা বিভিন্ন কৌশলে দেশে আসার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ বিদেশে অবস্থান করেও বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। উল্লেখ্য, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের নাম ভাঙিয়ে হাওয়া ভবনের যেসব প্রভাবশালী কর্মকর্তা দুর্নীতি করে টাকার পাহাড় গড়ে তোলেন তাদের কথা দেশের মানুষ এখনও ভুলতে পারেনি।

তাইতো ঘুরে ফিরে বার বার মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে হাওয়া ভবনের সেই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এখন কে কোথায়? তারা আবার সক্রিয় হচ্ছেন জানতে পেরে খোদ বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যেই আতঙ্ক বিরাজ করছে। সেই সঙ্গে তাদের মনে একটি প্রশ্ন বড় করে দেখা দিয়েছেÑ যাদের কারণে গত নির্বাচনে বিএনপির ভারাডুবি হয়েছে তারা কি আবারও বিএনপির ছায়াতলে আসার সুযোগ পাবে? খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাওয়া ভবনের বিতর্কিত কর্মকর্তাদের মধ্যে অধিকাংশই এখনও বিদেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ দেশে থাকলেও তারা এখনও লোকচক্ষুর অন্তরালে। বিএনপি কার্যালয় কিংবা দলীয় কোনো কর্মসূচিতে তাদের আর দেখা যায় না। তবে বিএনপির কোনো কোনো প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।

রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত ১৩ নম্বর সড়কের ৫৩ নম্বর বাড়িটির নাম ছিল ‘হাওয়া ভবন’। এটি ছিল মূলত বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়। তবে এখানে খালেদা জিয়া নিয়মিত না বসলেও তাঁর ছেলে বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান তার ঘনিষ্ঠজনদের নিয়ে নিয়মিতই বসতেন। আর আলোচিত-সমালোচিত এই হাওয়া ভবন থেকেই বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে নিয়ন্ত্রিত হতো অনেককিছু। তবে ২০০৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি বনানীর হাওয়া ভবনটি ছেড়ে দিয়ে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বসার জন্য গুলশানের ৮৬ নম্বর রোডের ৬ নম্বর বাড়িটি ভাড়া করা হয়।

বর্তমানে এখানে নিয়মিত বসে খালেদা জিয়া তাঁর রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করেন। জোট সরকারের আমলে হাওয়া ভবনের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য তারেক রহমান তাঁর আস্থাভাজন কিছু লোককে কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করেন। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে কেউ কেউ এখানে বসে তারেক রহমানের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, টেন্ডার বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য ও মনোনয়ন বাণিজ্য থেকে শুরু করে আর্থিক সুবিধা আদায়ের জন্য এমন কোনো কাজ নেই যা করতেন না। আর এই বিতর্কিত কর্মকা-ের কারণে হাওয়া ভবনের এই কর্মকর্তারাই একদিন এই ভবনকে দুর্নীতি ও অনিয়মের ভবন হিসেবে পরিচিত করেন। এর ফলে এই ভবনের প্রতি মানুষের মনে ঘৃণা ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়।

আশিক ইসলাম : হাওয়া ভবনের মুখপত্র ছিলেন আশিক ইসলাম। তার ক্ষমতার দাপটের কথা বলে শেষ করা যাবে না। তিনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রীর সহকারি প্রেস সেক্রেটারি ও ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের সদস্য ছিলেন। তখন চিত্রজগত ও বিটিভি চলতো তাঁর ইশারায়। এ ছাড়া তার অনুমতি ছাড়া তারেক রহমানের সঙ্গে কেউ দেখা করতে পারতো না।

হাওয়া ভবনে বিএনপির কোনো অনুষ্ঠান হলে কোন্ সাংবাদিক প্রবেশ করবে আর কোন্ সাংবাদিক প্রবেশ করতে পারবে না তা আশিকই ঠিক করে দিতেন। তারেক রহমানের নাম ভাঙিয়ে টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য ও মনোনয়ন বাণিজ্য থেকে শুরু করে অর্থ লোভে এমন কোনো কাজ নেই যা তিনি করেননি। পরবর্তীতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে আশিক ইসলাম তথ্য প্রতিমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার আগে তিনি ঢাকার ফকিরাপুলের মেসে থাকতেন। কিন্তু জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর মাত্র ৫ বছরে প্রায় শত কোটি টাকার মালিক বনে যান তিনি।

সে সময়ই তিনি আমেরিকায় একটি পেট্রোল পাম্প ও একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। ওয়ান-ইলেভেনের পর দেশ ছেড়ে আমেরিকায় চলে যান। বর্তমানে সেখানেই সপরিবারে অবস্থান করছেন। এ বছর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেলে আশিক ইসলাম তাঁর সফরসঙ্গীদের সঙ্গে দেখা করেন। তবে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি তিনি।

দেখা করতে না পারলেও যুক্তরাষ্ট্রের বাংলা পত্রিকা ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেয়া খালেদা জিয়ার বক্তব্য প্রচারের ব্যবস্থা করেন তিনি। সেখানে অবস্থান করেই তিনি এখন তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার পাশাপাশি আবার বাংলাদেশে এসে বিএনপির প্রেস উইংয়ে কাজ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। নুরুদ্দিন অপু : হাওয়া ভবনের আরেক দাপটশালী কর্মকর্তা মিয়া নুরুদ্দিন অপু। তিনি ছিলেন তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সচিব। তার অনুমতি ছাড়া মন্ত্রী-এমপিরাও তারেক রহমানের সাক্ষাৎ পেতেন না।

কিন্তু বড় রকমের আর্থিক লেনদেন হলে যে কাউকে তারেকের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও কাজ বাগিয়ে দিতেন অপু। বর্তমানে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অবস্থান করছেন তিনি। এখানে অবস্থান করেই তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন বলে জানা গেছে। আর তারেক রহমানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে বলে প্রচার চালিয়ে বিএনপি নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। এর ফলে বিএনপির যেসব নেতারা দলে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে চাচ্ছেন তারা এখন মালয়েশিয়া গিয়ে অপুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন।

আর এ সুযোগে অপু মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে সম্প্রতি মালয়েশিয়া গিয়ে অপুর সঙ্গে দেখা করেছেন এমন এক সূত্রে জানা গেছে। রফিকুল ইসলাম বকুল : হাওয়া ভবনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন সাবেক ছাত্রদল নেতা রকিবুল ইসলাম বকুল। তারেক রহমান ও হাওয়া ভবনের নাম ভাঙিয়ে প্রশাসনে নিয়োগ বাণিজ্য, বদলি ও পদায়নের কাজ করতেন তিনি। এক সময় বিদেশে পালিয়ে গেলেও বর্তমানে দেশেই আত্মগোপন করে আছেন বলে জানা গেছে। তবে তিনিও এখন বিএনপির কর্মকা-ে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন।

জয় : হাওয়া ভবনের আরেক প্রতাপশালী কর্মকর্তা ছিলেন বগুড়া থেকে নির্বাচিত সাবেক সাংসদ হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুর ছেলে জয়। ওয়ান-ইলেভেনের পর বিদেশে পালিয়ে গেলেও বর্তমানে দেশেই অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। তাকে এখন কোথাও দেখা যায় না। তবে বিএনপির কিছু নেতার সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। ফিরোজ মাহমুদ : হাওয়া ভবনের আরেক কর্মকর্তা ও তারেক রহমানের বন্ধু ডা. ফিরোজ মাহমুদ ইকবাল।

তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এসাইনমেন্ট অফিসার ছিলেন। এর ফলে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে একদিকে হাওয়া ভবন ও অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী অফিসে দাপটের সঙ্গে অবস্থান করতেন। নিয়োগ বাণিজ্য ও টেন্ডার বাণিজ্যসহ বিভিন্নভাবে দুর্নীতি করে টাকার পাহাড় গড়েছেন। ওয়ান-ইলেভেনের পর বিদেশে পালিয়ে যান। বর্তমানে মালয়েশিয়া অবস্থান করছেন।

সেখানে অবস্থান করেই তারেক রহমান ও বিএনপি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে বিএনপির কর্মকা-ে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। কামরুল ইসলাম : হাওয়া ভবনের আরেক প্রতাপশালী কর্মকর্তার নাম কামরুল ইসলাম। তিনি তারেক রহমানের এপিএস হিসেবে কাজ করতেন। তারেক রহমানের নাম ভাঙিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সব ধরনের কাজই করতেন তিনি। বর্তমানে দেশে অবস্থান করলেও লোকচক্ষুর অন্তরালে রয়েছেন।

তবে বিভিন্ন কৌশলে আবার বিএনপির কর্মকা-ে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অমিতাভ সিরাজ : বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের দাপটশালী মন্ত্রী শাজাহান সিরাজের ছেলে অমিতাভ সিরাজ অপু তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে হাওয়া ভবনের প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ পান। এখানে বসেই অপু একদিকে হাওয়া ভবন ও অপরদিকে বাবার প্রভাব খাটিয়ে টেন্ডারবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্নভাবে দুর্নীতি করে টাকার পাহাড় গড়ে তোলেন। বর্তমানে তিনি কোথায় আছেন কেউ বলতে পারছেন না। তার বাবা এখন বিএনপির রাজনীতিতে নেই, তবে মা রাবেয়া সিরাজ বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য।

তাই এ সুযোগে তিনিও বিএনপির কর্মকা-ে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। গিয়াস উদ্দিন মামুন : হাওয়া ভবনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন তারেক রহমানের বাল্যবন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার গিয়াস উদ্দিন আল মামুন। এই মামুন ছিলেন তারেক রহমানের অত্যন্ত বিশ্বস্ত। তাই মামুন যা বলতেন তারেক রহমান তাই করতেন। জোট সরকারের আমলে তারেক রহমান যেখানে যেতেন মামুনও সেখানে থাকতেন।

এই সুযোগে মামুন তার নাম ভাঙিয়ে দাপটের সঙ্গে যেখানে যা করার করে ফেলতেন। তারেকের বন্ধু হওয়ায় কেউ অভিযোগ করারও সাহস পেতেন না। ওয়ান-ইলেভেনের পর যৌথবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে বেশ ক’টি মামলা হয়। বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন তিনি। আলী আজগর লবি : ভাড়া সূত্রে হাওয়া ভবনের মালিক ছিলেন সাবেক সাংসদ আলী আজগর লবি।

তিনি লন্ডন প্রবাসী হাওয়া বেগমের কাছ থেকে বনানীর বাড়িটি ভাড়া নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক সচিবালয় হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। এ কারণে তিনি তারেক রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। নিয়মিত হাওয়া ভবনে যাওয়া-আসার কারণে তিনিও দোর্দ- প্রতাপশালী হয়ে উঠেন। এই সুযোগে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্নভাবে তিনি টাকার কুমিরে পরিণত হন। বিএনপির বর্তমান নির্বাহী কমিটিতে সদস্যপদ পেলেও তিনি দলীয় কার্যক্রমে অংশ নেন না।

এ ছাড়া বিএনপি কার্যালয়েও তাকে দেখা যায় না। তবে তিনিও দলে সক্রিয় হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সিলভার সেলিম : তারেক রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সুবাদে আরেক বিএনপি দলীয় সাবেক সাংসদ এমএএইচ সেলিম (সিলভার সেলিম) হাওয়া ভবনে নিয়মিত বসতেন। এই সুবাধে বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে আদম ব্যবসার একচেটিয়া নিয়ন্ত্রক ছিলেন তিনি। বর্তমানে বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে তাকে দেখা যায় না।

তবে তিনি তারেক রহমানের দেশে ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। হারিছ চৌধুরী : বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে হাওয়া ভবন ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সঙ্গে ‘কানেকটিং লিংক’ হিসেবে কাজ করতেন তৎকালীন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও প্রধানমন্ত্রীর ১ নম্বর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী। হাওয়া ভবনের নাম ভাঙিয়ে টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, পদায়ন ও বদলি থেকে শুরু করে হেন কাজ নেই যা তিনি করতেন না। ওয়ান-ইলেভেনের পর বিদেশে পালিয়ে যান। তার বিরুদ্ধে বেশ ক’টি দুর্নীতির মামলা হয়।

এ ছাড়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলারও আসামি তিনি। এক পর্যায়ে তার নামে হুলিয়া জারি করা হয়। ওয়ান-ইলেভেনের পর থেকে সিলেট থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের আসামের করিমগঞ্জে মামার বাড়িতে অবস্থান করলেও বর্তমানে লন্ডনে পাড়ি জমিয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। বিএনপি ও জিয়া পরিবারের সঙ্গে এখন তার কোনো যোগাযোগ নেই বলে জানা গেছে। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে বিএনপি’র হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে বিএনপির বেশ ক’জন সিনিয়র নেতা মন্তব্য করার ব্যাপারে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, হাওয়া ভবনের বিতর্কিত কর্মকর্তাদের কারণে বিএনপির অনেক ক্ষতি হয়েছে। তাই তারা যেন আর বিএনপির কাছে আসতে না পারে সে জন্য দলের নেতারা সতর্ক রয়েছেন। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৬ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।